পাকিস্তানে জুন মাস থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫৭ জনে। নিহতদের মধ্যে ৩২৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৬ জন এবং বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পিডিএমএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল বুনের জেলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ২১৭ জন। সেখানে আহত হয়েছেন আরও ১২০ জন।
• শাংলা জেলা: ৩৬ জন নিহত, ২১ জন আহত; ক্ষতিগ্রস্ত ৯৫টি বাড়ির মধ্যে ৫৫টি পুরোপুরি ধ্বংস
• মানসেহরা: ২৪ জন নিহত
• বাজওর: ২১ জন নিহত
• সোয়াত: ১৭ জন নিহত, অবকাঠামোগত ক্ষতি সবচেয়ে বেশি—২১৯টিরও বেশি বাড়ি ভেঙে পড়েছে
সোমবার (১৮ আগস্ট) প্রাদেশিক সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর জন্য ৮০০ কোটি রুপি ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বুনের জেলার জন্য অতিরিক্ত ৫০০ কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, বরাদ্দ অর্থ দিয়ে পুনর্বাসন, অবকাঠামো মেরামত, জরুরি চিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
পাকিস্তান জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) চেয়ারম্যান লে. জেনারেল হাইদার জানিয়েছেন, আগস্টের শেষ পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টির ঝুঁকি থাকবে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আরও দু-তিন দফা ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি জানান, “সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করছে। গুরুতর আহতদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অ্যাভিয়েশন ঘাঁটিগুলোও জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
বর্তমানে বন্যাকবলিত এলাকায় ৪২৫টিরও বেশি ত্রাণ শিবির চালু রয়েছে। এসব ক্যাম্পে খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক বাস্তুচ্যুত পরিবারকে স্থানীয় স্কুল ও সরকারি ভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য নিরাপদ পানি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা, যাতে মহামারি ছড়িয়ে না পড়ে।
এনডিএমএ চেয়ারম্যান হাইদার জানিয়েছেন, নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে। তবে তাদের খুঁজে না পাওয়া গেলে সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো বলছে, আগাম সতর্কতা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে।
Leave a comment