নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেও দেশের অনেক শিক্ষার্থী তাদের পাঠ্যবই হাতে পায়নি। সুনামগঞ্জে মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩৩ লাখেরও বেশি বই প্রয়োজন হলেও সোমবার পর্যন্ত সেখানে একটি বইও পৌঁছেনি। প্রাথমিক স্তরে ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির কিছু বই এলেও ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির কোনো বই পাঠানো হয়নি।
পাশের জেলা নেত্রকোনার অবস্থাও একই রকম। এই জেলায় মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩০ লাখের বেশি বই দরকার, তবে মাত্র ১৫ হাজার বই সরবরাহ করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে যেখানে ১৫ লাখ বইয়ের প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ৭ লাখ বই পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতি শুধু এই দুটি জেলার নয়; সারা দেশেই বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণে বিলম্ব দেখা দিয়েছে। এর ফলে বছরের প্রথম দিনে অনেক শিক্ষার্থী সব বই তো দূরের কথা, একটি বইও পাবে না।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৪০ কোটির বেশি বই মুদ্রণের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু আগে থেকেই চ্যালেঞ্জ অনুমান করে, তারা প্রাথমিকভাবে অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বই—বাংলা, ইংরেজি ও গণিত—প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। তবে সেটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায় এনসিটিবি নতুন পরিকল্পনা করেছে—প্রথম দিনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে অন্তত একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বই বিতরণ করা হবে। কিন্তু বই মুদ্রণ ও সরবরাহে যে দেরি হয়েছে, তাতে এই পরিকল্পনাও শতভাগ সফল হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এ বছরের নতুন শিক্ষাবর্ষে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এ জন্য ৪৪১টি বই পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, যা মুদ্রণে দেরির অন্যতম কারণ। তাছাড়া, পূর্বের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, চুক্তি চূড়ান্ত করতে দেরি হওয়া এবং মুদ্রণকারীদের সঙ্গে কাজ শুরুতে বিলম্ব হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
সোমবার পর্যন্ত প্রাক্-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণির জন্য প্রয়োজনীয় ৯ কোটি ৬৪ লাখ বইয়ের মধ্যে মাত্র ৩ কোটি ৯৪ লাখ বই বিতরণের অনুমোদন পেয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের ৩০ কোটি ৯৬ লাখ বইয়ের মধ্যে বিতরণযোগ্য হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৮ লাখ বই।
প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বছরের প্রথম দিনে অনেক শিক্ষার্থী একটি বইও পাবে না। পুরোপুরি বই বিতরণ শেষ হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, প্রথম দিনে প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে অন্তত একটি শ্রেণির জন্য বই পৌঁছে দেওয়া হবে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে অন্যান্য শ্রেণির বইও সরবরাহ করা হবে। যদি কাগজের সংকট না হয়, তবে ২০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
Leave a comment