চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আলোচিত কামরুল হাসান কাউসার (২১) হত্যাকাণ্ডের মূল নেপথ্যে উঠে এসেছে মায়ের পরকীয়া সম্পর্ক। এ ঘটনায় নিহতের মা হামিদা বেগমকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলাটি করেছেন নিহতের নানী ফরিদা বেগম। সোমবার (৬ অক্টোবর) ভূজপুর থানায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) হামিদা বেগমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম।
ওসি বলেন, “হামিদা বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”
নিহতের নানী ফরিদা বেগম বলেন, “সে মা হয়ে ছেলেকে হত্যা করেছে—এমন জঘন্য কাজ পৃথিবীতে আর দেখা যায় না। স্বামী প্রবাসে থাকায় হামিদা, করিম নামে এক অটোরিকশা চালকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আমরা আগেও সন্দেহ করেছিলাম, কিন্তু মেয়ে বলে চুপ ছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমার নাতিকে বৈদ্যুতিক শক, ব্লেড দিয়ে খুচিয়ে ও পিটিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের সামনেই হামিদা সব স্বীকার করেছে।”
সোমবার সকালে ফটিকছড়ির নারায়ণহাট ইউনিয়নের ইদিলপুর বাউদ্দার পাড় এলাকার পণ্ডিত বাড়ি থেকে কাউসারের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে ভূজপুর থানা পুলিশ। নিহত কাউসার স্থানীয় দুবাইপ্রবাসী কামাল ভূঁইয়ার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামিদার স্বামী কামাল ভূঁইয়া দুই বছর ধরে প্রবাসে আছেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে স্থানীয় সেমিপাকা বাড়িতে থাকতেন হামিদা। এ সময় পার্শ্ববর্তী এলাকার অটোরিকশাচালক করিমের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রতিবেশীরা জানান, করিম নিয়মিত হামিদার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। স্থানীয়দের বাধা সত্ত্বেও হামিদা সম্পর্ক চালিয়ে যান। ঘটনার আগের রাতে (রোববার, ৫ অক্টোবর) করিম হামিদার ঘরেই ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
তারা জানান, সেদিন রাতে হামিদা পরিকল্পিতভাবে দুই মেয়েকে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরদিন সকালে করিমের মাধ্যমে ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে মেয়েরা ফিরে এসে দেখে ভাইয়ের মরদেহ বিছানায় পড়ে আছে, পাশে মা কাঁদছেন।
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মঙ্গলবার সকালে দেশে ফেরেন নিহতের বাবা কামাল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “আমার ছেলে খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। কারো সঙ্গে ঝামেলা করত না। করিমের আসা-যাওয়া নিয়ে ছেলের সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হতো বলে জানতে পেরেছি।”
পুলিশ জানায়, কাউসার হত্যা মামলায় হামিদা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অটোরিকশাচালক করিমসহ অন্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তদন্তে প্রেম-ঘৃণা ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই হত্যার মূল প্রেক্ষাপট বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a comment