নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল বউবাজার এলাকায় এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্থানীয় একটি সাততলা ভবনের চতুর্থ তলা থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের চার বছরের সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন হাবিবুল্লাহ শিপলু (৩৫), তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম (২৮) ও ছেলে আফরান (৪)।
পুলিশ জানায়, দুপুর থেকে ওই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ থাকায় প্রতিবেশীরা বিষয়টি লক্ষ্য করেন। পরে তাদের সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) তারেক আল মেহেদী জানান, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী সন্তানকে হত্যার পর স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। শিপলুকে শোবার ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্যদিকে স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ বিছানায় পড়ে ছিল এবং তাদের মুখে বালিশ চাপা দেওয়ার চিহ্ন মিলেছে।
তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। তবে ময়নাতদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
নিহতের বড় ভাই অলিউল্লাহ লাভলু জানান, হাবিবুল্লাহ শিপলু স্থানীয় একটি সমিতিতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কয়েক মাস আগে সমিতির মালিক গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান। পরে গ্রাহকরা মালিকসহ শিপলুর বিরুদ্ধেও মামলা করেন। এ কারণে তিনি চরম মানসিক চাপে ছিলেন এবং পরিবারকেও নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন।
তিনি বলেন, “শিপলু ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু সমিতির মালিকের প্রতারণার কারণে গ্রাহকদের মামলা ও চাপ তার উপরেই এসে পড়ে। সম্ভবত এই হতাশা থেকেই সে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এলাকার এক প্রতিবেশী জানান, পরিবারটি শান্ত স্বভাবের ছিল এবং কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিপলুকে মানসিকভাবে অস্থির দেখা যেত। তিনি বলছিলেন, মামলা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, “এটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না। আর্থিক সংকট ও মানসিক চাপই হয়তো এর মূল কারণ।”
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পারিবারিক ও আর্থিক চাপের কারণে আত্মহত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋণগ্রস্ততা, মামলা-মোকদ্দমা, বেকারত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অনেক সময় মানুষকে এ ধরনের চরম সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে।
Leave a comment