সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কান্নায় ভেঙে পড়া ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার সুযোগ পেতে যাচ্ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী আনিসা আহমেদ। কিন্তু তদন্তে তার দাবি অনুযায়ী মায়ের আকস্মিক অসুস্থতার প্রমাণ না মেলায় সেই সুযোগ আর দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ১ আগস্ট, এইচএসসির প্রথমদিনে। সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর পৌঁছান আনিসা। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং জানান, সকালে মায়ের স্ট্রোক হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল। এ কারণে সময়মতো আসা সম্ভব হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কান্নার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হলে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘোষণা দেয়, বিশেষ ব্যবস্থায় আনিসাকে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
তবে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়—একটি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এবং অপরটি আনিসার কেন্দ্র সরকারি বাঙলা কলেজের পক্ষ থেকে। তদন্তে মায়ের হঠাৎ অসুস্থতা কিংবা হাসপাতালে ভর্তি সংক্রান্ত দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি দেওয়া ভর্তি স্লিপের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “আনিসার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফল বিবেচনায় বিশেষ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। তবে দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ নম্বর পেলে উভয় পত্রে পাস হিসেবে গণ্য হবে।” সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান জানান, তদন্ত কমিটি আনিসার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু সেগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
“শিক্ষার্থী যদি ভুয়া স্লিপ জমা দেয়, সেটির সত্যতা যাচাই কমিটির দায়িত্ব। তারা ঘটনার প্রমাণ না পাওয়ায় পরীক্ষা নিচ্ছে না,” বলে তিনি জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আনিসার মায়ের নিয়মিত চিকিৎসার রেকর্ড থাকলেও সেদিন হঠাৎ স্ট্রোক হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম পত্রে অনুপস্থিত থেকে দ্বিতীয় পত্রে ৬৬ নম্বর পেলে উভয় পত্রে পাস ধরা হবে।” ফলে এখন আনিসার সামনে একমাত্র সম্ভাবনা হলো বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ৬৬ বা তদূর্ধ্ব নম্বর পাওয়া। অন্য সব বিষয়ে পাস করলে তিনি এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হতে পারবেন।
এই ঘটনাটি শিক্ষা ক্ষেত্রে মানবিক দিক, নিয়ম-কানুনের প্রয়োগ ও প্রমাণ যাচাইয়ের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে। যেখানে একদিকে জনমতের চাপ ছিল, অন্যদিকে প্রক্রিয়াগত সত্যতা যাচাইয়ের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব পেয়েছে।
Leave a comment