বিশ্বজুড়ে কাজের পরিবেশে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। চার দিনের কর্মসপ্তাহ অনেক দেশের জন্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ালেও, প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু এগিয়ে গেছে আরও এক ধাপ। এই দেশে সপ্তাহে মাত্র এক দিন কাজ করতে হয়, বাকি ছয় দিন—ছুটি!
এ যেন শুনলেই অলীক কল্পনা মনে হয়। কিন্তু এই অবিশ্বাস্য বাস্তবতা সম্ভব করেছে ভানুয়াতু। কাজের ভারসাম্য ও জীবনের মান—এই দুইয়ের মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশটি। সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভানুয়াতুতে একজন মানুষ সপ্তাহে গড়ে মাত্র ২৪.৭ ঘণ্টা কাজ করেন, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন গড় কর্মঘণ্টার একটি।
এই সংস্কৃতি কেবল আইনগত বা নীতিগত নয়, বরং দেশটির সমাজ ও সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত। ভানুয়াতুবাসী ব্যক্তিগত সুখ, পরিবার এবং সামাজিক সম্পর্ককে জীবনের মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। তাই কাজের চেয়ে জীবনের মান এবং মানসিক শান্তিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম কাজ মানেই কম উৎপাদনশীলতা নয়। বরং, এতে মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে কর্মীদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। তাদের মতে, এই মডেল অন্যান্য দেশের জন্যও হতে পারে অনুকরণীয়।
তুলনামূলকভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাজের চাপ অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানায়, ভুটানে ৬১%, ভারতে ৫১%, বাংলাদেশে ৪৭% এবং পাকিস্তানে ৪০% কর্মজীবী প্রতি সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ফলে মানসিক চাপ, পারিবারিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যের অবনতি একসঙ্গে চলতে থাকে।
এই বাস্তবতায়, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেমন আইসল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং নিউজিল্যান্ড, চার দিনের কর্মসপ্তাহের দিকে ঝুঁকছে। এমনকি সৌদি আরবের কিছু কোম্পানিও পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করেছে।
ভানুয়াতুর এই ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসংস্কৃতি তাই নতুন করে প্রশ্ন তোলে—সুখী জীবন গড়তে কি বেশি কাজের প্রয়োজন হয়? নাকি সময়ের ব্যবস্থাপনাই আসল চাবিকাঠি?
Leave a comment