বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম রাজনৈতিক হামলাগুলোর একটি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা আজ নতুন এক আইনি মাইলফলকের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলমান এই মামলার আপিলের রায় আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। রায়ের দিনটি ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর আগ্রহ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও শেখ হাসিনার নির্বাচনী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন শতাধিক মানুষ। হামলার লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা, যিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
ঘটনার পর একাধিক মামলা দায়ের হয়। দীর্ঘ তদন্ত, বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে রায়ের পর মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টে দেওয়া রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বেশ কয়েকজন আসামি খালাস পান। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে শাস্তি বহাল রাখার আবেদন জানায়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। অপরদিকে, আসামিপক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখা উচিত। অপরদিকে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের খালাসের রায় বহাল রাখার আবেদন জানায়।
আপিলের শুনানি শুরু হয় গত ১৭ জুলাই। পরবর্তী ধাপে ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট ও ২০ আগস্ট শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২১ আগস্ট পঞ্চম দিনের শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করে।
শুনানির পুরো প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি তুলে ধরে। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করে, হামলার পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল এবং আসামিদের দায় অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে আসামিপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে দুর্বলতা ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি কেবল একটি ফৌজদারি মামলা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের প্রতীক। এই মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে কেবল আসামিদের আইনি অবস্থাই নির্ধারিত হবে না, বরং ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জনগণের আস্থা ও রাজনীতির ভবিষ্যৎও প্রভাবিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিচার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় দেশের বিচারব্যবস্থা, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।
আজকের রায় ঘোষণা দেশের রাজনীতি ও আইনি অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশবাসীর দৃষ্টি আজ সুপ্রিম কোর্টের দিকে—এই রায়ে হয়তো ২১ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে নিহতদের জন্য আংশিক হলেও ন্যায়বিচারের জবাব মিলবে।
Leave a comment