ফিলিস্তিনের গাজায় বন্দী থাকা জিম্মিদের নতুন ছবি প্রকাশ করেছে হামাস। সংগঠনটির সামরিক শাখা আল–কাসেম ব্রিগেড শনিবার বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ৪৬ জন জিম্মির ছবি ছড়িয়ে দেয়। প্রতিটি ছবির ওপর লেখা ছিল একই নাম—‘রন আরাদ’। হামাস দাবি করেছে, এগুলোই জিম্মিদের ‘বিদায়কালীন’ ছবি, যা তোলা হয়েছিল ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করার সময়।
রন আরাদ ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর একজন পাইলট ছিলেন। ১৯৮৬ সালে লেবাননের দক্ষিণে তাঁর বিমান ভূপাতিত হয় এবং শিয়া গোষ্ঠীগুলোর হাতে আটক হন বলে ধারণা করা হয়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি তাঁর মরদেহও উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল। এই দীর্ঘ হারিয়ে যাওয়া নামকে প্রতীকীভাবে ব্যবহার করে হামাস নতুন বার্তা দিতে চেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইসরায়েলের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার পর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে এখনো ৪৭ জন জিম্মি আছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে তাঁদের মধ্যে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। হামাসের পোস্টে জীবিত বা মৃত জিম্মিদের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীতে স্থল অভিযান অব্যাহত রেখেছে। কেবল আজ রোববারই শহরের কয়েকটি আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হয়, যাতে অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী, তাঁর দুই শিশু সন্তান এবং গর্ভস্থ সন্তানও। ওই পরিবারের স্বজন মোসাল্লাম আল–হাদাদ বলেন, “আমার পুত্রবধূ, তাঁর ছেলে, মেয়ে আর গর্ভে থাকা সন্তান—সবাইকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। আর আমার ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। শহর থেকে ইতিমধ্যে সাড়ে চার লাখ মানুষ পালিয়ে গেছেন। জিম্মিদের পরিবার এবং অনেক মানবাধিকার সংগঠন বলছে, গাজায় স্থল অভিযান চালালে বন্দী ইসরায়েলিদের জীবন আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে। সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবু প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে অভিযান থামছে না, আর সেই প্রেক্ষাপটেই হামাসের এই নতুন প্রচারণামূলক ছবি প্রকাশকে ঘিরে বাড়ছে রহস্য।

Leave a comment