সৌদি আরবের রাজপরিবারের এক যুবরাজ—যাঁর জীবনের কাহিনি যেন বাস্তবের ম্যালিফিসেন্ট-ছায়ায় মোড়া। ‘স্লিপিং প্রিন্স’ নামে পরিচিত যুবরাজ আল–ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল, বিগত ২০ বছর ধরে আছেন কোমায়। এই বছর ১৮ এপ্রিল তিনি পা দিলেন জীবনের ৩৬তম বছরে। কিন্তু দিনটি ছিল আগের মতোই—নিস্তব্ধ হাসপাতালের বিছানায়, চুপচাপ নিঃশ্বাসের কেবল মৃদু শব্দে।
২০০৫ সালে লন্ডনের একটি সামরিক কলেজে পড়াকালীন এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন যুবরাজ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে কোমায় চলে যান তিনি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি আর জ্ঞান ফিরে পাননি। দুই দশক ধরে চলা এই নিঃশব্দ সংগ্রামে যুবরাজের পরিবার, বিশেষ করে তাঁর পিতা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল, এক মুহূর্তের জন্যও হার মানেননি।
যুবরাজের চাচি, প্রিন্সেস রিমা বিনতে তালাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন যুবরাজের শৈশবের এবং বর্তমানের কিছু ছবি। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “আমার প্রিয় আল–ওয়ালিদ, ২১ বছর ধরে তুমি আমাদের হৃদয়ে আছো। আল্লাহ তোমার আরোগ্য দান করুন।” এই কথাগুলো যেন ফুটিয়ে তোলে পরিবারের ভালোবাসা, বেদনা আর অপেক্ষার অনন্ত যাত্রা।
বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং স্পেনের নামকরা চিকিৎসকেরা যুবরাজের চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন। ২০১৯ সালে একবার সামান্য নড়াচড়ার ইঙ্গিত দেখা গেলেও, সেটিও ছিল অবচেতন প্রতিক্রিয়া। বর্তমানে রিয়াদের কিং আবদুল আজিজ মেডিকেল সিটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি, একটি বিশেষায়িত দল সর্বক্ষণ তাঁর সেবাযত্নে নিয়োজিত। চিকিৎসকেরা বলছেন, এত দীর্ঘ সময় কোমায় থাকার পর জেগে ওঠার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে পরিবার এখনও নিরাশ নয়।
প্রিন্স খালেদ বলেন, “যদি আল্লাহ চাইতেন তার মৃত্যু হোক, তবে দুর্ঘটনার সময়ই তা হতো। আল্লাহ যিনি তার প্রাণকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এত বছর, তিনিই তাঁকে সুস্থ করে তুলতে পারেন।” এই কথাগুলো শুধু একজন পিতার বিশ্বাস নয়, বরং অগাধ ভালোবাসা আর অপেক্ষার এক অনন্য নিদর্শন।
আজকের দিনেও, যখন রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্য রাজনীতি, বাণিজ্য কিংবা সংস্কৃতিতে আলো ছড়াচ্ছেন, যুবরাজ আল–ওয়ালিদ রয়েছেন আলোচনার এক আলাদা কেন্দ্রে—একটি আশার প্রতীক হয়ে। তাঁর জীবনের এই অধ্যায় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবন কতটা অনিশ্চিত, আর ভালোবাসা, ধৈর্য ও বিশ্বাস কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
এই দীর্ঘ ঘুমের শেষ কোথায়—তা হয়তো কেউ জানে না। কিন্তু তাঁর পরিবারের এই নিঃশব্দ যুদ্ধ, আর বিশ্ববাসীর সহানুভূতি, আল–ওয়ালিদকে আজ এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। ‘স্লিপিং প্রিন্স’-এর ঘুম কি কোনোদিন ভাঙবে? উত্তর সময়ই দেবে।
Leave a comment