Home বিজ্ঞান মঙ্গলে বিশেষ কাঠামো কি প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ
বিজ্ঞান

মঙ্গলে বিশেষ কাঠামো কি প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ

Share
Share

 

মঙ্গল গ্রহ, একসময় কেবল বিজ্ঞান কল্পকাহিনির কেন্দ্রবিন্দু হলেও এখন তা গবেষণা আর প্রযুক্তির শীর্ষ আগ্রহের স্থান। লাল এই গ্রহ নিয়ে চলমান কল্পনা ও গবেষণার জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে কিছু অদ্ভুত গঠন ও কাঠামোর ছবি, যেগুলোর উৎস এবং উদ্দেশ্য ঘিরে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

সম্প্রতি মার্কিন গবেষণা সংস্থা “দ্য কাইডোনিয়া ইনস্টিটিউট”-এর প্রতিষ্ঠাতা জর্জ জে. হাস তার নতুন বই দ্য গ্রেট আর্কিটেক্টস অব মার্স’-এ দাবি করেছেন, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে দেখা অদ্ভুত সব কাঠামো আসলে একটি বিলুপ্ত প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। তিনি বইটিতে মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন অঞ্চলের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, কীভাবে এই কাঠামোগুলো পৃথিবীর প্রাচীন স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সঙ্গে মিলে যায়।

২০১১ সালে নাসার মার্স রিকনেসান্স অরবিটার মঙ্গলের লিবিয়া মন্টস অঞ্চলে একটি বিশাল কাঠামোর ছবি তোলে, যা চাবির মতো দেখতে। একদিকে গোল মাথা, অন্যদিকে লম্বা দণ্ড। দূর থেকে তা বিশাল বিস্ময় চিহ্নের মতো দেখা যায়। জর্জের মতে, এটি জাপানের কোফুন সমাধির নকশার সঙ্গে বেশ মিলে যায়।

২০০২ সালে পাওয়া আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, এক বিশাল আগ্নেয়গিরির মুখটি অনেকটা টিয়াপাখির চোখ ও ঠোঁটের মতো। সঙ্গে পালক মেলে দেওয়া ডানার মতো গঠনও রয়েছে। এটি ‘প্যারোটোপিয়া’ নামে পরিচিতি পেয়েছে গবেষকদের মধ্যে। হাসের ভাষায়, এটি প্রকৃতির সৃষ্টি নয়, বরং একটি নিখুঁত শিল্পকর্ম।

মঙ্গল গ্রহের এলিসিয়াম অঞ্চলে একটি তিন পার্শ্বযুক্ত পিরামিডের মতো গঠন পাওয়া যায়, যা ‘সাগান পিরামিড’ নামে পরিচিত। এটি প্রথম ১৯৭২ সালে মেরিনার ৯ মহাকাশযানের মাধ্যমে ধারণ করা হয়। কার্ল সাগান নিজে এই গঠনকে উল্লেখ করেছিলেন এক বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে।

দক্ষিণ গোলার্ধের আটলান্টিস চ্যাওস অঞ্চলে দেখা যায় একটি শহর সদৃশ বিন্যাস। খাড়া পার্শ্ববিশিষ্ট স্তূপ ও মালভূমির এই বিন্যাস দেখে মনে হয়, এটি কোনো বৃহৎ স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ। পৃথিবীর সৌদি আরব বা যুক্তরাষ্ট্রের নির্জন অঞ্চলের ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের সঙ্গে এটির চেহারা প্রায় এক।

নেপেন্থেস মেনসে অঞ্চলে দেখা গেছে এক তারকা আকৃতির পাঁচ বাহুবিশিষ্ট গঠন, অনেকটা বিশাল স্টারফিশ বা দুর্গের মতো। জর্জের মতে, এটি কোনো ত্রিকোণ দুর্গের নকশা ছিল, যা আজ ধূলিসাৎ।

তবে এই সব কাঠামোর বাস্তবতা নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে দ্বিমত রয়েছে। লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী রবিন ক্রেমার মনে করেন, এটি ফেস প্যারেডোলিয়ার প্রতিফলন—অর্থাৎ মস্তিষ্ক পাথরের আকৃতিতে চেনা মুখ বা অবয়ব খুঁজে পেতে চায়। ফলে বাস্তবে যা নিছক একগুচ্ছ শৈলচিত্র, তা কল্পনায় রূপ নেয় শহর, ভাস্কর্য বা পিরামিডে।

যা-ই হোক, মঙ্গলের এই অদ্ভুত সব গঠন ও ছবি আবারও প্রশ্ন তুলেছে—আমরা কি মহাবিশ্বে একা?
আর যদি একা না-ই হই, তাহলে এই রহস্যময় কাঠামোগুলোর নির্মাতা কারা? উত্তরের অপেক্ষায় আছে গোটা মানবজাতি।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

সামিরার কোনো দোষ নেই, সালমান শাহ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন: ডন

বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য তিন দশক পরও দর্শকদের মনে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করছে। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক সাক্ষাৎকারে, সালমান...

পূর্ব তিমুর এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আসিয়ানের ১১তম সদস্য

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে পূর্ব তিমুর। এটি দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট...

Related Articles

এআই তৈরি ম্যালওয়্যারে র‍্যানসমওয়্যার হামলার বৈশ্বিক আশঙ্কা

সাইবার জগতে নতুন এক আতঙ্কের নাম ‘প্রম্পটলক’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি...

রহস্যময় ব্ল্যাকহোলের অজানা যত কথা

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর—মহাকাশের এমন এক রহস্যময় অস্তিত্ব, যার মাধ্যাকর্ষণ এতটাই শক্তিশালী যে...

এইডস ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করলো একদল বিজ্ঞানী

একটি মাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে এইডসের কারণ HIV-এর সদৃশ ভাইরাস SIV সফলভাবে মুছে...

মানুষের ভাঙা দাঁত পুনরায় গজানোর ওষুধ আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে জাপান

মানুষের দাঁত প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় গজানোর সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে জাপানের বিজ্ঞানীরা।...