বরিশাল নগরীর সদর রোড এলাকার একটি বাসা থেকে ঝালকাঠি জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
মৃত কেকা বরিশালের সদর রোড এলাকার বাসিন্দা হিরন আহমেদ লিটুর স্ত্রী। মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি হত্যাকাণ্ড নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু—এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “রাত ৯টার দিকে জাতীয় সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ঘরে ঢুকে দেখি কেকার মরদেহ খাটে শোয়া অবস্থায় রয়েছে। মহিলা পুলিশ তার দেহ পরীক্ষা করে দেখে শরীরের এক পাশে রক্ত জমাট বাঁধা রয়েছে।”
প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহে কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, কেকাকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছে। তারা বলেন, মৃত্যুর পর বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয় এবং কাউকে খবর দেওয়া হয়নি।
কেকার এক আত্মীয় জানান, “যে ঘরে কেকার মরদেহ ছিল, সেই রুমের সামনে স্বামী লিটু হাতে রামদা নিয়ে বসে ছিলেন। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেননি। আমরা সন্দেহ করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।” স্বজনরা জানিয়েছেন, তারা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে কেকার মেয়ে দিতান আহমেদ জানিয়েছেন, তার মা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন এবং কয়েক বছর আগে হার্টে রিং বসানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “বিকেল থেকে মায়ের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে রাতে রুমে গিয়ে দেখি, মা খাটে পড়ে আছেন। তখনই বাবাকে জানাই। আমার মনে হয়, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।”
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “রোববার রাতে কেকা নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান। পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত দরজা না খোলায় পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। পরে মেয়েরা দরজা খুলে দেখতে পান, তিনি মৃত অবস্থায় খাটে পড়ে আছেন।”
তিনি আরও জানান, “মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তবে এটি আত্মহত্যা, অসুস্থতা নাকি হত্যাকাণ্ড—তা এখনই বলা যাচ্ছে না। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।”
৪০ বছর বয়সী শারমিন মৌসুমি কেকা ঝালকাঠি জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি গত জুলাই-আগস্ট মাসে তিনটি মামলার আসামি ছিলেন, যেগুলো রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে দায়ের করা হয়েছিল।
ঘটনার পর বরিশাল নগরজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, কেকা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন, তবে সম্প্রতি কিছুটা নিভৃত জীবনযাপন করছিলেন। সাবেক যুব মহিলা লীগ নেত্রী শারমিন মৌসুমি কেকার মৃত্যু বরিশাল ও ঝালকাঠির রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার মৃত্যু স্বাভাবিক না পরিকল্পিত—তা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
Leave a comment