গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক রমজান মুন্সি। এর আগে সংঘর্ষের দিনে গুলিতে আরও চারজন নিহত হন।
সহিংস ঘটনার পর পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, যানবাহন ভাঙচুর এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গোপালগঞ্জের সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ মোট ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ২২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের ধরতে জেলা জুড়ে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নিহত রিকশাচালক রমজান মুন্সির পরিবার দাবি করেছে, তিনি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন।
রমজানের বড় ভাই জামাল মুন্সি জানিয়েছেন, কারফিউ চলাকালে তিনি রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন এবং সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন।
অন্যদিকে নিহত আরও চারজনের দাফন-মরদেহ হস্তান্তর ময়নাতদন্ত ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে, যা নিয়ে আইনগত ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম মাহিদুল ইসলাম বলেছেন, গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত না হওয়া প্রমাণ সংগ্রহ ও বিচারের পথে বড় বাধা।
তিনটি মামলার মধ্যে সদর থানার মামলা হয়েছে পুলিশের ওপর হামলা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে, কাশিয়ানীতে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ এবং কোটালীপাড়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। সহিংসতার জেরে গোপালগঞ্জে বুধবার রাত থেকে জারি থাকা কারফিউয়ের মেয়াদ শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
যদিও কারফিউর মাঝেও শহরের রাস্তায় শুক্রবার সকাল থেকে যান চলাচল ও মানুষের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক স্বাভাবিক। কাঁচাবাজার, লঞ্চঘাট ও বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
রিকশাচালক ও নিম্নআয়ের মানুষেরা বলছেন, পেটের দায়ে তারা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় বের হয়েছেন। গোপালগঞ্জে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কোনো পক্ষের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস না আসায় নিহতদের পরিবার বিচারের আশায় অনিশ্চয়তায় রয়েছে।
Leave a comment