গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় একদিনেই অন্তত আরও ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ত্রাণ ও পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ রয়েছেন। কেবল গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এদিন ইসরায়েলি সেনারা শহরটিতে স্থল অভিযানও শুরু করেছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানায়।প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আল-সাবরা মহল্লা। গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় অব্যাহত আক্রমণ চলছে। স্থানীয়রা জানায়, পুরো মহল্লা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজা সিটি দখলের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার এ ঘোষণা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, দখলের নামে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে।
একইদিন খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় পানির লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সাত শিশু ছিল।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এক বিবৃতিতে বলেন, “মানুষরা কেবল পানি সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল। সরাসরি তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে—এটি নতুন এক হত্যাযজ্ঞ।” তিনি অনলাইনে নিহত শিশুদের রক্তাক্ত দেহ ও পানির পাত্রের ছবি প্রকাশ করেন, যা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
গাজা সিটিতে আল-আফ পরিবারের বাড়িতে এক হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই হামলা ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রমাণ।” বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করে বলা হয়, এই হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের শামিল।
অভিযানে সাংবাদিকরাও বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার আল-মানারার রস্মি সালেম ও ইমান আল-জামলি নিহত হন। এতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০-এর বেশি। আন্তর্জাতিক মহল এটিকে গণমাধ্যম দমনের কৌশল হিসেবে দেখছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা হামাসকে পরাজিত করার জন্য লড়ছি।” কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, হামাসের নামে নির্বিচারে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে নেতানিয়াহু আসলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন করছেন।
গাজায় চলমান সংঘাতের মাত্রা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। একদিনেই ১০৫ জনের মৃত্যু, যার মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা, বসতবাড়িতে নির্বিচার বোমাবর্ষণ এবং সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে।
Leave a comment