ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সুখবর নিয়ে এসেছে প্রবাসী আয়। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনেই বৈধ চ্যানেলে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, শেষ দুই দিনেই এসেছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মাস শেষ হওয়ার আগেই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এ ধারা অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। ব্যাংকারদের মতে, অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা এখন বৈধ পথে টাকা পাঠানোর প্রতি বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। আগে অনেকেই অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন, কিন্তু সরকারের কঠোর নজরদারি ও নীতিগত পরিবর্তনের ফলে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে শুধু রেমিট্যান্সের পরিমাণই বাড়েনি, ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকটও অনেকটা কমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম ১৫ দিনেই দেশে এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার। এরপর ১৯ মার্চ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলারে, যেখানে শুধু ১৯ মার্চেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। ২২ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চে বেড়ে দাঁড়ায় ২৭০ কোটি ডলারে। আর ২৬ মার্চ পর্যন্ত তা আরও বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। মাস শেষ হতে চার দিন বাকি থাকায় এবং বর্তমান ধারা বিবেচনা করলে বলা যায়, চলতি মাসের রেমিট্যান্স ৩০০ কোটি ডলারের নতুন রেকর্ড গড়বে।
ঈদের সময় সাধারণত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়, কারণ প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি টাকা পাঠান। গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে মাত্র পাঁচ দিনেই ৪৫ কোটি ডলার এসেছে, অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার করে এসেছে। এবারের চিত্রও তার ব্যতিক্রম নয়, বরং আগের তুলনায় রেমিট্যান্সের হার আরও বেশি।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে মোট প্রবাসী আয় ছিল ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতেও আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এই ধারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১,৮৪৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, ব্যাংকগুলোর মধ্যে এখন ডলার কেনার প্রতিযোগিতা কমে আসায় বিনিময় হারও স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে প্রতি ডলারের মূল্য ১২৩ টাকার মধ্যে রয়েছে, যা আমদানি ব্যয় কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দামেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অথচ কয়েক মাস আগেও ডলারের দাম ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
সব মিলিয়ে, ঈদের আগে প্রবাসী আয় নতুন রেকর্ড গড়তে চলেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। প্রবাসীদের এই অর্থ শুধু রিজার্ভকেই শক্তিশালী করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
Leave a comment