হবিগঞ্জ শহরে দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাসায় ভুয়া চিকিৎসা সেবা চালানোর অভিযোগে মমতাজ বেগম রিনা নামে এক নারীকে আটক করেছে র্যাব। বুধবার বিকেলে শহরের ফায়ার সার্ভিস সড়কের ঘোষপাড়া এলাকায় রিনার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। র্যাব কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তার ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুসহ বহু রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
র্যাব—৯ সিপিসি—৩ এর কমান্ডার মো. শাহ আলম জানান, মমতাজ বেগম রিনা কোনো ধরনের মেডিকেল ডিগ্রি বা পেশাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নিজের বাসাতেই শিশু প্রসব করানো, প্রসূতি সেবা প্রদান, ক্ষত সারানো এবং বিভিন্ন চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি। তার অপচিকিৎসায় অন্তত এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়।
শাহ আলম আরও বলেন, “মমতাজ বেগম রিনা নিজেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে তিনি চিকিৎসা ও প্রসব করানোর নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। অনেক সময় ভুল চিকিৎসা ও অযত্নের কারণে রোগীরা মারাত্মক অবস্থায় হাসপাতালে যেতে বাধ্য হতেন। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে।”
র্যাবের অভিযানে রিনার বাসা থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম, শিশুর প্রসব করানোর যন্ত্রপাতি এবং রোগীর প্রেসক্রিপশনসহ বেশ কিছু নথি জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এসব যন্ত্রপাতির বেশিরভাগই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী নয় বা সঠিকভাবে ব্যবহারের প্রশিক্ষণ তার ছিল না। তবে তিনি এসব ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন।
অভিযান শেষে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। র্যাব জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা, প্রতারণা এবং মানবজীবন ঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গ্রামীণ এলাকায় ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এইসব ভুয়া চিকিৎসকরা রোগীর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে নিজেদের আর্থিক লাভ করছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ভুল চিকিৎসা ও অপরিকল্পিত প্রসব করানোর ফলে মা ও শিশুর মৃত্যু বাড়ছে।
Leave a comment