চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে । বাবার হাতে নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ শাহেদ (২২) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার মায়নী ইউনিয়নের পশ্চিম মায়নী গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহত শাহেদ চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ওই গ্রামের প্রবাসী নুরুজ্জামানের একমাত্র ছেলে।
শাহেদের মা কামরুজ্জাহান সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছিল। নুরুজ্জামান সৌদি আরব থাকার সময় সিলেট জেলার এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসে ওই নারীকে বিয়ে করে ঘরে আনেন।
এ ঘটনার পর থেকেই দাম্পত্য সম্পর্কে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে বিবাদ বাড়তে থাকায় বুধবার বিকেলেই মীরসরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটল চরম দুর্ঘটনা।
মা কামরুজ্জাহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে ছেলের সঙ্গে বাবার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শাহেদের বাবা হাতে থাকা ছুরি দিয়ে বুকের মধ্যে আঘাত করেন। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আমার ছেলে। কোন অপরাধে আমার ছেলেটাকে হত্যা করা হলো? আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।”
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আর্যরাজ দত্ত বলেন, “হাসপাতালে আনার আগেই শাহেদ মারা যান। তার বুকে ছুরিকাঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”
মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,“পারিবারিক কলহের জেরে বাবা-ছেলের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বাবা ছুরিকাঘাত করলে শাহেদ নিহত হন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।”
শাহেদের অকাল মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। সহপাঠীরা বলছেন, তিনি মেধাবী ও প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর এমন মৃত্যুতে তারা হতবাক ও ক্ষুব্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা। পারিবারিক সহিংসতা, অবিশ্বাস ও সম্পর্কের টানাপোড়েন কিভাবে রক্তাক্ত পরিণতি ডেকে আনে, এই ঘটনা তার নির্মম উদাহরণ।
নিহত শাহেদের পরিবার দাবি করছে, এ হত্যার কঠোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় এলাকাবাসীও এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
Leave a comment