ব্রিটিশ সার্জন নিল হপারকে ৩২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে নিজের দুই পা ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে ফেলার পর তিনি বিমা কোম্পানির কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের ট্রুরো ক্রাউন কোর্টে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
৪৯ বছর বয়সী হপার কর্নওয়ালের রয়েল কর্নওয়াল হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জন হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তদন্তে উঠে আসে, তিনি বারবার ড্রাই আইস ব্যবহার করে নিজের পা ক্ষতিগ্রস্ত করতেন এবং ২০১৯ সালের এপ্রিলে সেগুলো কার্যক্ষমতা হারালে নিজেই কেটে ফেলেন। এরপর বিমা কোম্পানিকে জানান, সেপসিসের কারণে তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এই মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এভিভা ও ওল্ড মিউচুয়াল হেলথ থেকে চার লাখ ৬৬ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পান। অর্থ খরচ করেন ক্যাম্পারভ্যান, বাড়ি ও বিলাস সামগ্রী কিনতে।
আদালতের শুনানিতে বলা হয়, হপারের কর্মকাণ্ড কেবল প্রতারণা নয়, তা তাঁর অস্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তির সঙ্গেও সম্পর্কিত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাঁর ওপর ১০ বছরের ‘সেক্সুয়াল হার্ম প্রিভেনশন অর্ডার’ জারি করা হয়েছে। প্রতারণার অর্থ উদ্ধারে আদালত আলাদা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর বাড়িও বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
হপারের বিরুদ্ধে বিকৃত পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণের তিনটি অভিযোগও আনা হয়েছে। এর আগে তিনি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার প্রতিবন্ধী নভোচারী কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে পা হারানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবিসি ওয়েলস ও একটি তথ্যচিত্রেও বক্তব্য দেন তিনি।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর পুরোনো রোগীরা আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, তিনি যেসব চিকিৎসা দিয়েছেন, তা হয়তো অপ্রয়োজনীয় ছিল। ফলে আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন অনেকেই। যদিও রয়েল কর্নওয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁর অনিয়ম সরাসরি রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
আদালতের শুনানিতে আরও জানা যায়, আরেক অভিযুক্ত মারিয়াস গুসতাভসনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়েই হপারের তথ্য বেরিয়ে আসে। গুসতাভসন জীবিত মানুষের অঙ্গ কেটে বিকৃত শারীরিক পরিবর্তন আনা–সংশ্লিষ্ট এক আন্তর্জাতিক চক্র পরিচালনা করতেন। ওই চক্রের কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও হপারের যোগাযোগ ছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
এই কেলেঙ্কারি যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত বিকৃতি ও প্রতারণার ঘটনা স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থায় নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
Leave a comment