পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ফানিকুলার (ক্যাবল রেল) এলিভাদোর গ্লোরিয়াতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৮ জন, যাদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হঠাৎ ফানিকুলারটি দ্রুতগতিতে নিচের দিকে নেমে যায় এবং পাশের একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে গুঁড়িয়ে যায়। এতে কাঠের বাক্সের মতো ভেঙে গিয়ে যাত্রীদের ওপর চাপা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে দেশি ও বিদেশি নাগরিক রয়েছেন, যদিও বিদেশিদের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আহতদের লিসবনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ও তার শিশু সন্তানও রয়েছে।
গর্ভবতী নারীকে লিসবন মাতৃত্ব হাসপাতাল এবং শিশুটিকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল দোনা এস্টেফানিয়াতে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুজনের অবস্থাই এখনো আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে শোক নেমে এসেছে। লিসবনের সিটি মেয়র কার্লোস মোয়েদা বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় বলেন, “আমাদের শহরে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা তাদের পাশে থাকব।” পর্তুগাল সরকার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। রাজধানী লিসবনে টানা তিন দিন শোক পালন করা হবে।
লিসবনের এলিভাদোর গ্লোরিয়া ফানিকুলারটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে রেসতোরাদোরেস থেকে বাইরো আলতো এলাকায় যাত্রী পরিবহন করে। ১৮৮৫ সালে চালু হওয়া এই সেবা প্রায় ১৪০ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাহাড়ি শহর লিসবনের উপরে-নিচে যাতায়াতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল এটি। শহরের সাতটি পাহাড় জুড়ে চলাচলের জন্য লিসবনে আরও কয়েকটি ফানিকুলার চালু রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর সবগুলো সার্ভিসই সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পর্তুগাল সরকার। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্রেক সিস্টেমের ত্রুটি অথবা যান্ত্রিক গোলযোগ এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাচীন এ ব্যবস্থার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা অবিলম্বে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।
পর্তুগালের এই দুর্ঘটনা শুধু দেশটির জনগণ নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যটক মহলেও গভীর শোক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সরকারি তদন্ত শেষ হলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে লিসবন সিটি করপোরেশন।
Leave a comment