অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় রক্তাক্ত হয়ে উঠছে প্রতিটি দিন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার (২৪ আগস্ট) একদিনেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে ২৪ জন ত্রাণের অপেক্ষায় থাকাকালে মারা গেছেন। এছাড়া ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আরও ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। চলমান সংঘাত শুরুর পর থেকে শুধু অনাহার-সংকটে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে, যাদের মধ্যে ১১৫ জন শিশু।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার জেতুন ও সাবরা মহল্লায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে এক হাজারেরও বেশি ভবন ধ্বংস করেছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত মানুষ চাপা পড়ে আছেন। টানা গোলাবর্ষণ ও অবরুদ্ধ সড়কের কারণে উদ্ধারকাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক বিবৃতিতে সিভিল ডিফেন্স জানায়, “গাজার কোথাও এখন আর নিরাপদ নয়। ঘরবাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, এমনকি ত্রাণ শিবিরও রেহাই পাচ্ছে না বোমাবর্ষণ থেকে।”
ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক নিয়ে সাবরা এলাকায় প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স আশঙ্কা করছে, এটি রাফাহ শহরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে, যেখানে পুরো শহর ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। শহরের আল-জালাআ সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বিমান হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
চিকিৎসা সূত্র জানায়, নিহত ৫১ জনের মধ্যে ২৭ জন গাজা শহরে সরাসরি বোমাবর্ষণে মারা গেছেন , আর ২৪ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে খাদ্যাভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক্ষুধার্ত মানুষ সহায়তা নিতে গিয়ে বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন।
সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, “ক্ষুধার্ত মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, নেই ওষুধ ও সরঞ্জাম। প্রতিদিন আহতদের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েলের এই অভিযান আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রাখা এবং আশ্রয়কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানো সরাসরি যুদ্ধাপরাধের শামিল।
Leave a comment