২৪ এপ্রিল, আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস—একটি দিন যেটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শব্দের শক্তি এবং এর প্রভাবের কথা। শব্দ শুধু শ্রবণযোগ্যতা বা আওয়াজ নয়, এটি একটি শক্তিশালী প্রভাবক যা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার উপর গভীর ছাপ ফেলে। এই দিবসটি ১৯৯৬ সালে ‘সেন্টার ফর হিয়ারিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন (CHC)’ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শব্দদূষণ এবং উচ্চমাত্রার শব্দ কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা তৈরি করা।
বিশ্বের নানা প্রান্তে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জার্মানি, ইতালি, ব্রাজিল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত—এই দিনটি ঘিরে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। সেমিনার, আলোচনা সভা, নীরবতা পালন, শ্রবণ পরীক্ষা এবং সচেতনতা মিছিলের মতো নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যাতে করে মানুষ শব্দের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল উচ্চ শব্দ নয়, দিনের পর দিন নিরবিচারে কম-মাত্রার শব্দের মধ্যেও জীবনযাত্রা অতিবাহিত করলে তা ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হ্রাস করতে পারে, মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধা হতে পারে। শহুরে জীবনে গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজের আওয়াজ, উচ্চ ভলিউমে মিউজিক—এসব কিছু মিলে প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ বাড়ছে। অথচ আমরা অনেকেই জানি না এই শব্দ আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দিবস পালনের প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো শব্দ সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে। একাধিক শ্রবণ প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল বিনামূল্যে কানের চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘নীরব এলাকা’ নির্ধারণ করে সেখানে অতিরিক্ত শব্দ বন্ধে ভূমিকা রাখছে।
এই দিবস আমাদের শেখায়—শব্দ যেমন যোগাযোগের একটি অপরিহার্য উপায়, তেমনি অতিরিক্ত শব্দ হতে পারে নীরব ঘাতক। তাই প্রয়োজন শব্দ ব্যবহারে সংবেদনশীলতা ও নিয়ম মেনে চলার মানসিকতা গড়ে তোলা। আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ, শব্দসীমিত একটি পৃথিবী গড়তে হলে আজ থেকেই শব্দ সচেতনতায় জোর দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস হোক একটি আহ্বান—নিজের এবং আশেপাশের মানুষের শ্রবণস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়ার। কারণ শব্দ কেবল শোনা নয়, বোঝারও বিষয়।
Leave a comment