বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়গুলোর একটির সমাপ্তি হতে যাচ্ছে কি? ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—সাকিব আল হাসান আর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারবেন না।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ও আলোচিত তারকা সাকিব আল হাসান হয়তো আর জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন না। যদিও তিনি নিজে এখনও আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণা দেননি, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া সোমবার রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সাফ জানিয়ে দেন—সাকিবের জন্য বাংলাদেশের দলে আর কোনো জায়গা নেই।তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, “এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে—সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ দলে খেলতে পারবেন না।”
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সাকিব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। এর সূত্রপাত হয় সাকিবের ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে।
সাকিব প্রথমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতেও ফেসবুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু বিতর্ক চরমে পৌঁছায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের একটি পুরোনো ছবি দিয়ে লেখেন—“শুভ জন্মদিন, আপা।”
এই পোস্টে ছাত্র-জনতা এবং অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে লিখেন, “একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। কিন্তু আমি ঠিকই ছিলাম। ইন্ড অব দ্য ডিসকাশন।”
এর জবাবে সাকিব পাল্টা লেখেন, “যাক, শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!”
সাকিব আগে থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে জনমতের চাপ এড়াতে তিনি দাবি করতেন, কেবল জনগণের সেবার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “যতবার তিনি খেলার জন্য ফিরে আসতে চেয়েছেন, বলেছেন—আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু প্রমাণ পাওয়া গেছে, তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দেশে যখন ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চলছিল, তখন কানাডায় পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাচ্ছিলেন সাকিব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি পোস্ট করছিলেন।
এই সিদ্ধান্তে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট সাকিবের মতো বিশ্বমানের অলরাউন্ডারকে হারাতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, জাতীয় দলের জার্সি কোনো রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিব সমর্থকরা লিখছেন, “তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট আইকন। রাজনৈতিক মতভেদের কারণে তাকে বাদ দেওয়া উচিত নয়।” অন্যদিকে আরেক পক্ষের দাবি, “জাতীয় দলের মর্যাদা ব্যক্তিগত অবস্থানের ঊর্ধ্বে।”
সাকিব আল হাসান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাননি। তবে ক্রীড়া উপদেষ্টার এই স্পষ্ট ঘোষণা কার্যত তার জাতীয় দল অধ্যায়ের ইতি টেনে দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব ছিলেন সাফল্যের প্রতীক। এখন প্রশ্ন হলো—তার ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায় কি এভাবেই রাজনৈতিক বিতর্কে আবৃত হয়ে যাবে?
Leave a comment