যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা (stabilisation) বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেছে—এমন তথ্য জানিয়েছে দেশটির দুই জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। তাদের বরাতে রয়টার্স প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা ‘গাজা পরিকল্পনা’র একটি মূল উপাদান।
উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন বলছে তারা বাহিনীতে সমর্থন ও সমন্বয়মূলক ভূমিকা নিতে সর্বোচ্চ ২০০ জন পর্যন্ত কর্মী দিতে রাজি হতে পারে; কিন্তু এসব কর্মী সরাসরি গাজা প্রান্তরে পাঠানো হবে না। একই সঙ্গে বর্তমানে ওই অঞ্চলে প্রায় দুই ডজন মার্কিন সেনা সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে অবস্থান করছে।
উপদেষ্টারা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা এখনও অনেক তীব্র। যুদ্ধবিরতি বা চুক্তির পরেও স্থানীয় নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি দ্রুত ধ্বস্ত হতে পারে—এই ঝুঁকি কমাতে আন্তর্জাতিক উপস্থিতি জরুরি বলে তাদের মত। তারা ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠন, বেসামরিকদের রক্ষা এবং পুনর্গঠনকে এই বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন।
রয়টার্স সূত্রে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মিসর, কাতার ও আজারবাইজানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে—তবে এখনও কোনো রাষ্ট্র চূড়ান্তভাবে যোগদানের ঘোষণা করেনি। কৌশলগত ও সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো মেনে চলা জটিল হতে পারে।
অফিশিয়াল বিবরণে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ২০০ জনের স্বীকৃতি মূলত ‘সহযোগী ও সমন্বয়কারী’ ভূমিকায়—গাজায় প্রবেশ না করেই তারা পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়, লজিস্টিক সহায়তা এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে যোগাযোগ তদারকি করবে। পুরো ব্যবস্থাটি কীভাবে পরিচালিত হবে—একটি বহুজাতিক কমান্ড-স্ট্রাকচার না জাতীয় দানশীল ইউনিটগুলো মিলিয়ে—সে বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন পর্যায়ে এই পদক্ষেপ নিয়ে সংশয় রয়েছে। একটি বহুজাতিক বাহিনী গঠন করতে গেলে অংশগ্রহণকারী দেশের রাজনৈতিক ইচ্ছা, আইনি কাঠামো, নিরাপত্তা শর্ত ও কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর সমন্বয় জরুরি। তদুপরি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আস্থাও বড় চ্যালেঞ্জ—গণ্যমান্য অংশীদার ছাড়া বাহিনীকে গ্রহণযোগ্য করা কঠিন। তাছাড়া, হামাসকে অস্ত্রশূন্য করার দাবি ও বাস্তবায়নও জটিল কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ইস্যু তৈরি করতে পারে।
উপদেষ্টারা বলেছেন—গাজায় কাউকে জোর করে স্থানান্তর করা হবে না এবং পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম মূলত হামাস মুক্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে। ট্রামপ পরিকল্পনা অনুসারে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও পুনর্সংগঠন কাজের অংশ হিসেবেই এসব উদ্যোগ দেখা হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবে পুনর্গঠন ও সহায়তা বিতরণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
উপদেষ্টারা আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের জন্য জিম্মি নিহতদের দেহাবশেষ উদ্ধারের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। ধ্বংসস্তূপ ও অপরিপক্ব বিস্ফোরিত অস্ত্রের কারণে উদ্ধার অভিযান দীর্ঘ হতে পারে; তথ্য প্রদানকারীদের জন্য পুরস্কার সুবিধার কথা ভাবা হচ্ছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ—গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল বাহিনী তৈরির পরিকল্পনা—শান্তি ও পুনর্গঠনে একটি কাঠামো প্রদান করতে পারে, বাস্তবায়ন ও অংশগ্রহণের রাজনৈতিক, কৌশলগত ও মানবিক বাধা সহজে কেটে যাবে না। কট্টরআস্থা, কূটনৈতিক সমঝোতা ও উপস্থিত অংশীদারদের দীর্ঘমেয়াদি নিষ্ঠা ছাড়া এই পরিকল্পনা দ্রুত ফলদায়ী হবে না— বিশ্লেষকরা এমনই মনে করছেন।
Leave a comment