ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণায় যুক্ত হলো পশ্চিমা প্রভাবশালী তিন দেশ—যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আসা বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের পর এবার এই তিন শিল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করল। এর ফলে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সরাসরি ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে না গেলেও প্রতীকী দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির তাৎপর্য আলাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিল লন্ডন। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেও পরিচিত ছিল দেশটি। সে কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়াটা শক্তিশালী বার্তা বহন করছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এ স্বীকৃতি কি বাস্তবে ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আনবে? ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, গাজায় চলমান হামলা এবং পশ্চিম তীরে সীমিত নিয়ন্ত্রণ—এসব কারণে ফিলিস্তিন এখনো পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি। সীমান্ত, রাজধানী ও সেনাবাহিনীর স্বীকৃতি ছাড়াই তাদের অস্তিত্ব এখনো অনেকটাই প্রতীকী।
এমন পরিস্থিতিতেই যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার একযোগে স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে ঘিরে নতুন আলোচনার দ্বার খুলে দিল। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সব স্থায়ী সদস্য এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওয়াশিংটনের অবস্থান ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়বে।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, ফ্রান্স যদি দ্রুত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, তখন নিরাপত্তা পরিষদের চারটি স্থায়ী সদস্যই ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানাবে। কেবল যুক্তরাষ্ট্র থাকবে ব্যতিক্রম, যাদের অবস্থান ইসরায়েলের প্রতি অটল সমর্থনের দিকেই ঝুঁকছে।
অতএব, নতুন এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের জন্য বাস্তবিক অগ্রগতি না আনলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের দাবিকে আরও দৃঢ় করেছে। একই সঙ্গে এটি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বিশ্বব্যাপী সংহতির এক শক্ত বার্তা হয়ে দাঁড়াল।

Leave a comment