মাদারীপুরে ১১ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের দায়ে জাহিদুল মাতুব্বর (২৬) নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে আদায় করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণা করেন মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শরীফ কেএম রেজা জাকের। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) শরীফ মো. সাইফুল কবীর বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশের বিচারব্যবস্থা নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধে শূন্য সহনশীল। আদালত শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই দেননি, বরং আর্থিক জরিমানার আদেশ দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষতিপূরণের দিকেও নজর দিয়েছেন।”
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ আগস্ট বিকেলে ডাসার থানার মধ্য ধুলগ্রাম এলাকায় ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেন আসামি জাহিদুল মাতুব্বর। ঘটনার পরপরই শিশুটির বাবা বাদী হয়ে ডাসার থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।মামলার তদন্তভার পান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম শেখ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে জাহিদুল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
বিচার প্রক্রিয়ায় মোট আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক আসামির অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন। আদালত বলেন, “শিশুর প্রতি এমন নিষ্ঠুর ও জঘন্য অপরাধ সমাজে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা আবশ্যক।”
রায় অনুযায়ী, আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এই অর্থ আদায় নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শরীফ মো. সাইফুল কবীর জানান, “বিচারক যুক্তি, সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়সঙ্গত রায় দিয়েছেন। এই রায় সমাজে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে।” অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেন, অভিযোগটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আসামি নির্দোষ। তবে আদালত তাদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে করেননি।
রায় ঘোষণার পর স্বস্তি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছে। বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলার সংখ্যা বাড়লেও আদালতের কঠোর অবস্থান আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
মাদারীপুরের এই মামলাটি বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনবিরোধী আইনি প্রয়োগের একটি স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আদালতের এই রায় সমাজে অপরাধ দমনে ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং ভবিষ্যতে এমন অপরাধ ঠেকাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a comment