নেপালে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ‘জেন-জি আন্দোলন’ রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বর এলাকায় অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে শত শত তরুণ-তরুণী মৈতিঘর এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ স্লোগান ও মিছিল চললেও পরে তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনের মূল ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস, জলকামান এবং সরাসরি গুলি ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। এসময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ‘#NepoKids’ ও ‘#NepoBabies’ হ্যাশট্যাগে ক্ষমতাশালী পরিবারের সন্তানদের আধিপত্য, দুর্নীতি ও অযোগ্যতাকে সমালোচনা করে আসছিল। তবে সম্প্রতি সরকার ২৬টি অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম।
‘হামি নেপাল’ নামের একটি সংগঠন প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুং বলেন, “সরকারের অনিয়ম, দমননীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে বই হাতে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল, যাতে শান্তিপূর্ণ বার্তা দেওয়া যায়। কিন্তু পুলিশি পদক্ষেপ আন্দোলনকে সহিংসতায় ঠেলে দিয়েছে।”
অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় রাজধানীর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারফিউ জারি করেছে। বিশেষ করে নিউ বানেশ্বর, শীতলনিবাস (রাষ্ট্রপতির বাসভবন), লেইনচৌর (উপ-রাষ্ট্রপতির বাসভবন) এবং বালুয়াটার (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) এলাকায় চলাচলে কড়া নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আন্দোলন কেবল প্রজন্মগত ক্ষোভ নয়, বরং নেপালের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতার প্রতিফলন। দমনমূলক পদক্ষেপ আন্দোলনকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে বলেও তারা সতর্ক করেছেন।
Leave a comment