Home জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভাঙন শুরু এনসিপিতে, একে-অপরকে দোষারপ করছেন রিফাত-উমামা
জাতীয়

নির্বাচনের আগেই ভাঙন শুরু এনসিপিতে, একে-অপরকে দোষারপ করছেন রিফাত-উমামা

Share
Share

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উমামা ফাতেমার সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ। একদিকে উমামা যখন দাবি করছেন, সংগঠনটি ‘সুবিধাবাদীদের হাতে’ চলে গেছে, অন্যদিকে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি রিফাত রশীদ উল্টো প্রশ্ন তুলেছেন, উমামা আদৌ সংগঠনের প্রতি কতটুকু দায়িত্ববান ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

গতকাল শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে উমামা ফাতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন আর কোনো আদর্শিক মঞ্চ নয়। বরং এটি সুবিধাবাদী এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তিকারীদের দ্বারা দখলকৃত একটি অকার্যকর ব্যানারে পরিণত হয়েছে।’ নিজের পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমি ছিলাম মুখপাত্র, কিন্তু আন্দোলনের ফেসবুক পেজে কখনোই অ্যাকসেস পাইনি। দিনের পর দিন অপমান, হেয়তা এবং নানা প্রকার রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছি।’

এই পোস্টটি দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা ১০ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া এবং আড়াই হাজারেরও বেশি শেয়ার পায়। অনেকেই মন্তব্যের ঘরে উমামার সাহসিকতার প্রশংসা করেন এবং তাঁর অভিযোগগুলোর যথাযথ তদন্ত দাবি করেন।

এদিকে আজ শনিবার বিকেলে উমামার অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম আলোকে প্রতিক্রিয়া জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্তমান সভাপতি রিফাত রশীদ। তিনি বলেন, ‘উনি তো অনেক অভিযোগ করেছেন, কিন্তু নিজের দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছেন, সেটা নিয়ে তাঁর নিজেরই আত্মসমালোচনা করা উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংগঠনের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একেবারে অযৌক্তিক নয়।’

রিফাত আরও বলেন, ‘এটা স্পষ্ট, অনেক কিছুই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা হয়েছে। সেসব বিষয়ে তাঁর নিজের উপলব্ধির মূল্য রয়েছে, তবে সংগঠনের কাঠামো ও আদর্শের প্রতি তাঁর যে দায়বদ্ধতা থাকা উচিত ছিল, তার প্রতিফলন আমরা পাইনি।’

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এতে রিফাত রশীদ সভাপতি এবং মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু নতুন কমিটিতে জায়গা পাননি উমামা ফাতেমা, যিনি দীর্ঘ সময় সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভোটপ্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সীমিত।

উমামা ছিলেন জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার অন্যতম সক্রিয় সংগঠক। সেই সময় তিনিই ছিলেন প্ল্যাটফর্মের প্রধান সমন্বয়কারী। তাই তাঁর সরে যাওয়া সংগঠনের জন্য শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও বড় ধরনের ধাক্কা।

উমামার অভিযোগে অনিয়মের পাশাপাশি উঠে এসেছে রাজনৈতিক পুনর্বাসন, ব্যক্তিগত আক্রমণ, এমনকি দলীয় প্রভাব বিস্তার সংক্রান্ত ইঙ্গিতও। এ বিষয়ে রিফাত বলেন, ‘কিছু অভিযোগ সংস্থার ভেতরের নয়, বরং বহিরাগত হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমরা এসব বিষয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা সত্য, জুলাই বিপ্লবের বছর ঘুরে আবার এসেছে। কিন্তু এই বিপ্লবের রূপরেখা বাস্তবায়নে আমরা এখনও অনেক দূরে। সংগঠনের কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের সংগঠনের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা কতটুকু—সেটিও আলোচনায় এসেছে। যদি কেউ শুধু নিজের নাম ব্যবহার করে আদর্শ বিকিয়ে দেয়, তাহলে তা সংগঠনের জন্য বিপজ্জনক।’

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, উমামার পোস্টের পর সংগঠনের অভ্যন্তরে এবং সামাজিক মাধ্যমে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেকেই সংগঠনের শুদ্ধি অভিযানের দাবি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ চাইছেন নিরপেক্ষ তদন্ত, কেউবা আবার উমামাকে ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা সম্পর্কে রিফাত বলেন, ‘আমরা চাই জুলাই বিপ্লবের আদর্শের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে। সংগঠন এখন শুদ্ধি ও শক্তি সঞ্চয়ের পর্যায়ে। ব্যক্তির চেয়ে আদর্শ বড়—এই বিশ্বাসেই আমরা এগিয়ে যাব।’

সাংগঠনিক কাঠামো, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আদর্শিক সংঘাতের এই জটিল প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে—তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবে উমামা ফাতেমার বিদায়ের পর সংগঠনের যাত্রা যে আর আগের মতো থাকছে না, সেটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস নতুন উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করেছেন

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নিজের উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করেছেন। রোববার (২৬ অক্টোবর) তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন, যদি তিনি কোনো কারণে পদে থাকতে না পারেন,...

এক-এগারো আর বাংলাদেশে আসবে না – মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, “এক-এগারো বাংলাদেশে আর আসবে না। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে নিজেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”...

Related Articles

বিচারের দাবিতে সালমান ভক্তরা মাঠে নামবে

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুকে ঘিরে নতুন করে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার...

মেট্রোরেলে চাকরি পাচ্ছেন বিয়ারিং প্যাড দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন

ঢাকা মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত পথচারী আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী আইরিন...

ঝালকাঠিতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে তিন মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঝালকাঠিতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পৃথক অভিযানে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা...

ভোলায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু

ভোলার লালমোহন উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই চাচাতো বোনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার...