চীনের তৈরি পিএল–১৫ অতি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তান গত মে মাসে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তোলে। সেই ঘটনার কয়েক মাস না পেরোতেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব আরও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী আগামী অর্থবছরে এআইএম–২৬০ নামের এক নতুন আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট প্রস্তাব করেছে।
লকহিড মার্টিন দীর্ঘ আট বছর ধরে এ ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি শিগগিরই উৎপাদনে যেতে পারবে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২০২৬ অর্থবছরে মার্কিন বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী প্রায় ১০০ কোটি ডলার চাইছে। এর মধ্যে কেবল বিমানবাহিনীই প্রথমবারের মতো ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার এআইএম–২৬০ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা কমিটির কাছে আরও অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া হয়েছে। নৌবাহিনীও আলাদাভাবে ৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ প্রস্তাব করেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, উৎপাদন বাড়লে মোট ব্যয় ৩ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
এআইএম–২৬০ ক্ষেপণাস্ত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক অস্ত্র হিসেবে ধরা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এআইএম–১২০ এএমআরএএএম যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ১৯৯৩ সালে তৈরি হওয়ায় এটি এখন আধুনিক যুদ্ধে অনেকাংশেই পিছিয়ে পড়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে এতটা আগ্রহী।
লকহিড মার্টিনের সাম্প্রতিক আর্থিক চাপে এ প্রকল্প আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোম্পানিটি সম্প্রতি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ১৬০ কোটি ডলারের ক্ষতি এবং কর–সংক্রান্ত সম্ভাব্য দায় হিসেবে ৪৬০ কোটি ডলারের উল্লেখ করেছে। ফলে লাভজনক নতুন কর্মসূচি তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হামলা এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। গত মে মাসে পাকিস্তান চীনের তৈরি পিএল–১৫ ব্যবহার করে শত মাইল দূর থেকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। প্রতিপক্ষের পাল্টা আক্রমণের ঝুঁকি ছাড়াই আঘাত হানতে পারা এই ক্ষেপণাস্ত্র আন্তর্জাতিক কৌশলগত ভারসাম্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে চীন ইতিমধ্যেই পিএল–১৫ এর উন্নত সংস্করণ পিএল–১৭ তৈরি করেছে, যা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। পেন্টাগনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের এ উন্নয়ন তাদের আকাশযুদ্ধে অগ্রগতি স্পষ্ট করে।
মার্কিন বিমানবাহিনীর দাবি, নতুন এআইএম–২৬০ ক্ষেপণাস্ত্র এফ–২২ ও এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারযোগ্য হবে, পাশাপাশি এফ–১৬ ও এফ–১৫ যুদ্ধবিমানেও এটি সংযুক্ত করা সম্ভব। ফলে এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধ কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রকে উল্লেখযোগ্য বাড়তি সুবিধা দিতে পারবে।
তবে প্রকল্পটি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তা স্পষ্ট করেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ। যদিও তারা বলছে, একবার এআইএম–২৬০ কার্যকর হলে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দীর্ঘপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র।
Leave a comment