জাতীয় সরকার গঠন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকাকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ৩১ জুলাই দুপুরে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে নাহিদ দাবি করেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে জাতীয় সরকার গঠন ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব তাঁরা দিয়েছেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি আরও বলেন, ওই সময় প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম তাঁরা প্রস্তাব করেছিলেন।
এই বক্তব্যের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, নাহিদের দাবি সত্য নয়। তারেক রহমানের সঙ্গে এমন আলোচনা হয়েছে কি না, তা দল জানে না। ফখরুলের আগের দেওয়া সাক্ষাৎকার উল্লেখ করে নাহিদ দাবি করেন, সেখানে সত্য গোপন করা হয়েছে।
নাহিদ আরও অভিযোগ করেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম মিথ্যা দাবি করেছেন যে ছাত্রশক্তি গঠনে শিবিরের নির্দেশনা ছিল। তিনি ব্যাখ্যা দেন যে, ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্র, ঢাবির ছাত্র অধিকার পরিষদ ও জাবির একটি স্টাডি সার্কেল মিলেই ছাত্রশক্তি গঠিত হয়, যা পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে। শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও তাদের প্রভাব বা নেতৃত্ব ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।
শিবির নেতা সাদিক কায়েম পাল্টা বক্তব্যে বলেন, তিনি মাঠপর্যায়ে এবং নীতিনির্ধারণে সক্রিয় ছিলেন এবং মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে ছিলেন। নাহিদ যা বলছেন, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদের পোস্টে সবচেয়ে আলোচিত অংশ হলো ২০২৪ সালের ২ আগস্ট রাতে একটি সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ। তিনি লেখেন, প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরসহ একটি পক্ষ ছাত্র সমন্বয়কদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সামরিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার প্রচেষ্টা চালায়, যা তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে সেনাবাহিনী ও রাজনীতির মিশ্রণে নতুন এক-এগারোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে জুলকারনাইন সায়ের বলেন, এটি একটি হাস্যকর ও ভিত্তিহীন প্রচারণা, যার উদ্দেশ্য মূলধারার অপকর্ম থেকে দৃষ্টি সরানো।
একই দিন জুলকারনাইন তার নিজস্ব ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিয়াদকে নজরদারিতে রাখার অভিযোগ মিথ্যা। বরং নাহিদ ভুল তথ্য পেয়ে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ছাত্র আন্দোলনের ভেতরের দ্বন্দ্ব এবং জাতীয় সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পক্ষের জড়িত থাকার বা না থাকার বিতর্ক রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে যখন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী পালিত হচ্ছে, অন্যদিকে নাহিদের এই পোস্ট এবং সংশ্লিষ্টদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও সরগরম করে তুলেছে।
Leave a comment