চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে বিষাক্ত রেকটিফাইড স্পিরিট পানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। দুদিনে একে একে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আরও একজন বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় কয়েকজন মিলে রেকটিফাইড স্পিরিট পান করেন। এরপর শুক্রবার থেকেই তাদের মধ্যে শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। শনিবার থেকে একে একে পাঁচজন মারা যান। রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হলে বিষয়টি এলাকায় প্রকাশ পায়।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন—
১. নফরকান্তি গ্রামের পূর্বপাড়ার ভ্যানচালক খেদের আলী (৪০)
২. খেজুরা গ্রামের হাসপাতালপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম (৪০)
৩. পিরোজখালী গ্রামের স্কুলপাড়ার ভ্যানচালক মোহাম্মদ লালটু ওরফে রিপু (৩০)
৪. শংকরচন্দ্র গ্রামের মাঝেরপাড়ার শ্রমিক মোহাম্মদ শহীদ (৪৫)
৫. ডিঙ্গেদহ গ্রামের টাওয়ারপাড়ার মিল শ্রমিক মোহাম্মদ সামির (৫৫)
৬. ডিঙ্গেদহ এশিয়া বিস্কুট ফ্যাক্টরি পাড়ার শ্রমিক সরদার মোহাম্মদ লালটু (৫২)
এ ছাড়া একই এলাকার দিনমজুর আলিম উদ্দিন গুরুতর অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন,
“রোববার বিকেল ৫টার দিকে লালটু নামে এক ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি দুদিন আগে স্পিরিট পান করেছিলেন। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও সন্ধ্যা ৭টা ৩২ মিনিটে তিনি মারা যান।”
তিনি আরও জানান, “রেকটিফাইড স্পিরিট মূলত শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হয় এবং তা পান করার উপযোগী নয়। এ ধরনের স্পিরিটে মিথানল বা অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক থাকার সম্ভাবনা থাকে, যা অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলেও প্রাণঘাতী হতে পারে।”
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন,“শনিবার (১১ অক্টোবর) দুজন এবং রোববার (১২ অক্টোবর) আরও চারজন মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষাক্ত রেকটিফাইড স্পিরিট পানে তাদের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।”
তিনি আরও জানান, “কে বা কারা এই স্পিরিট সরবরাহ করেছে, কোথা থেকে এসেছে এবং কীভাবে তারা এটি পেয়েছিল—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেকটিফাইড স্পিরিটে সাধারণত মিথানল (Methanol) থাকে, যা পান করলে শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়। এতে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে কিডনি বিকল ও মৃত্যুও ঘটতে পারে। অল্প পরিমাণ মিথানল গ্রহণেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা বলেন, সঠিক চিকিৎসা না পেলে মিথানল বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছে। অবৈধ মদ বিক্রি ও রেকটিফাইড স্পিরিট সরবরাহ চক্রের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছয়জনের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবার ও সহকর্মীরা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
Leave a comment