ইসরায়েলের টানা হামলায় গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, রবিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৮ জনে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৬ জন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টাতেই নতুন করে ৮৭ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৪০৯ জন।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের মর্গে অন্তত ৪৫ জন নিহতের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বজনরা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বহু মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় পড়ে আছে, যেখানে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন না।
মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়েও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩১ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১৩২ জন। শুধুমাত্র খাদ্যসামগ্রী নিতে গিয়ে ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেছে ২ হাজার ৪১৬ জনের, আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ হাজার ৭০৯ জন।
অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। রবিবারই অনাহারে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ কারণে মোট ৩৮৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৩৮ শিশু। মার্চে সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ২৪ লাখ মানুষের এই অঞ্চল এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে।
জাতিসংঘ স্বীকৃত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) উত্তর গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। সংস্থাটির আশঙ্কা, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস পর্যন্ত সংকট ছড়িয়ে পড়তে পারে। আইপিসি ঘোষণার পর থেকে কেবল অনাহারে মারা গেছেন ১০৯ জন, এর মধ্যে ২৩ শিশু।
১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল ফের ব্যাপক হামলা শুরু করার পর নিহত হয়েছেন ১১ হাজার ৯১১ জন এবং আহত হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি। এর মধ্য দিয়ে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যত ভেঙে যায়।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলেও চলছে আইনগত পদক্ষেপ। গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর
Leave a comment