ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের তীব্র আকাশ ও স্থল হামলা ২০ সেপ্টেম্বর এক ভয়াবহ রূপ নেয়—তখনকার খবর অনুযায়ী অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালকের পরিবারের সদস্য, গাজা সিটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকে থাকা সাধারণ মানুষ এবং আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা নারী ও শিশু।
হামলার তীব্রতা ও লক্ষ্যভিত্তিকতার কারণে গাজা শহর, বিশেষ করে গাজা সিটি, সাম্প্রতিককালে সরাসরি আক্রমণের কোন্দলে পরিণত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী মূলত শহর দখল ও বাসিন্দাদের জোরপূর্বক দক্ষিণে ঠেলে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে টানা আকাশ ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে—ফলে আবাসিক ভবন, স্কুলভিত্তিক আশ্রয়কেন্দ্র, তাঁবু ও মানুষ বহনকারী যানবাহন পর্যন্ত টার্গেট করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব লক্ষ্যবিন্দুতে আঘাত করার ফলে ৭৬ জনের বেশি নিহত হয়েছে ।
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যে একটি ছিল আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার স্বজনদের নিহত হওয়া। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাজের মধ্যেই তার ভাই, ভাবি এবং তাদের শিশু সন্তানদের মরদেহ সামনে এসে পড়ে। আবু সালমিয়া বরাবরই সংকটে থাকা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নিয়ে দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছেন।
গাজার নাসর এলাকায় আরও এক বীভৎস দৃশ্য দেখা যায়—একটি ট্রাক লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় পালিয়ে চলা কয়েকজন নিহত হয়েছেন; প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা রক্তাক্ত দেহের চিত্র তাদের চিত্তকে আঘাত করেছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষ্য এবং ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের বর্ণনা অনুযায়ী বোমা-ড্রোন ও ভূ-চালিত অনুশীলনের সংমিশ্রণে ক্ষয়ক্ষতি সীমাহীন রকম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গত কয়েক মাসে গাজার অবকাঠামো ধ্বংসের কথা জানিয়েছে—গ্যাস, পানি ও
বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা ভেঙে পড়েছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগস্ট থেকে চলমান অভিযানে কমপক্ষে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
আল জাজিরার রিপোর্টার হিন্দ খুদারি বর্ণনা করেন, হাজারো মানুষ গাজার বিভিন্ন অংশ থেকে নির্বাসিত হয়ে দক্ষিণদিকে পালানোর চেষ্টা করলেও, পথেই তাদের অপেক্ষায় রয়েছে আরও হামলা ও মৃত্যুর ভয়। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল অত্যাধুনিক অস্ত্র, সহ বিস্ফোরকভর্তি রোবট ব্যবহার করে আঘাত করে—যার প্রতিটি বিস্ফোরণে এলাকায় ভূমিকম্পের মতো ধাক্কা লাগে।
হামাসের পক্ষ থেকে এসব আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, লক্ষ্য ছিল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে গাজার বাইরে যেতে বাধ্য করা—একে তারা ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী বার্তা’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী হত্যা ও কয়েকশকে আটক করার ঘটনাও ঘটেছে; এই অভিযোগগুলি আন্তর্জাতিক মনোযোগের দাবি জানায়।
এ পরিস্থিতিতে মানবিক সঙ্কট আরও ঘণিয়ে উঠেছে—পানিসংকট, বিদ্যুৎবিহীনতা, ওষুধের অভাব, হাসপাতালের অচলাবস্থায় মানুষ বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগও হারিয়ে ফেলছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা, ত্বরিত মানবিক পদক্ষেপ ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান এই মুহুর্তে ফের জোরালো হচ্ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্ভুল, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ত্রাণ ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া না হলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে—এটাই সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা।
Leave a comment