ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হলো আজ। উৎসবমুখর পরিবেশে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ শুরু হয়েছে । সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
মোট ৩৯ হাজার ৭৭৫ শিক্ষার্থী এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন । তারা কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদ এবং হল সংসদের ১৩টি পদে ভোট দেবেন। একজন ভোটারকে মোট ৪১টি ভোট দিতে হবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করতে প্রথমবারের মতো আবাসিক হলের বাইরে ৮টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার রাতে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই। চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, গুজবে কান না দিয়ে বৈধ কার্ড সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে।
শান্তিপূর্ণ প্রচারণা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা-
এবারের নির্বাচনে প্রচারণা তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ উঠলেও, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বড় কোনো অভিযোগ কিংবা সহিংসতা ঘটেনি।
ঢাবি উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন রয়েছে দুই হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য। সরকারের পক্ষ থেকেও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা-
৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ৬২ জন নারী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
• সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ৫ জন নারী।
• সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, যার মধ্যে ১ জন নারী।
• সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, যার মধ্যে ৪ জন নারী।
ভোটারদের মধ্যে ২০,৮৭৩ জন ছাত্র এবং ১৮,৯০২ জন ছাত্রী রয়েছেন। বিকেল ৪টার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন পাঁচটি প্যানেল রয়েছে-
(.)ছাত্রদল নেতৃত্বাধীন প্যানেল
(.)ছাত্রশিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল
(.)ছাত্রসংসদ নেতৃত্বাধীন প্যানেল
(.)উমামা ফাতেমা নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেল
(.)শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি নেতৃত্বাধীন বামপন্থী প্যানেল
বিশেষ করে ভিপি ও জিএস পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দীর্ঘ ইতিহাস বহন করে। ডাকসু সবসময় জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে।
১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ বিরতির অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নানা অনিয়মের অভিযোগে সেটির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। সেই বিতর্কের ছয় বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন, যা শিক্ষার্থীদের কাছে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বড় পরীক্ষা। গত জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ডাকসুর গঠনতন্ত্র আংশিক সংশোধন করে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে। এর পর ১২ আগস্ট প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
প্রার্থীরা নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবহন, আবাসন, পাঠদানের মানোন্নয়নসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, নির্বাচন শুধু শান্তিপূর্ণভাবে শেষই হবে না, বরং ঘোষিত ফলাফলও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটাই প্রত্যাশা— ভোট-পূর্ব সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ যেন ফলাফল ঘোষণার পরও বজায় থাকে।
Leave a comment