পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটি। পিটিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সালমান আকরাম রাজা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের মন্তব্যকে “হাস্যকর”, “ভিত্তিহীন” এবং “বাস্তবতা-বিবর্জিত” বলে আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, ইমরান খান কোনওভাবেই জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি নন; বরং তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও দুর্বল হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে পাকিস্তানের শীর্ষ দৈনিক ডন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ইমরান খান সেনাবাহিনীবিরোধী বক্তব্য প্রচার করছেন, যা এখন “রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি” হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
পিটিআই শনিবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্যকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করে। সালমান আকরাম রাজা বলেন, “পাকিস্তানের মানুষ ইমরান খানের পাশে আছে। তাকে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি বলা শুধু হাস্যকর নয়, বরং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।”
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে জাতীয়তাবাদী, ধর্মভিত্তিকসহ নানা মতাদর্শ থাকলেও ইমরান খান সবসময় দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং সমর্থক-ভোটারদের প্রতি তার অবস্থান ছিল অবিচল।
সংবাদ সম্মেলনে রাজা সতর্ক করে বলেন, “ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া এত সহজ হবে না। খাইবার পাখতুনখাওয়ার নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে কোনো অনির্বাচিত প্রশাসন বসানোর চেষ্টা করা হলে এর পরিণতি সেনাবাহিনীকেই বহন করতে হবে।”
আইএসপিআরের বক্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ উল্লেখ করে পিটিআই সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না দলটি। তিনি বলেন, “দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি বলা নির্বুদ্ধিতার শামিল। এর আগেও জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।”
তিনি প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, ইতিহাসে বহুবার জনপ্রিয় নেতাদের টার্গেট করে ‘রাষ্ট্রের হুমকি’ তকমা দেওয়া হলেও কোনো প্রচেষ্টাই টেকেনি। তার মতে, “সামরিক শাসন সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।”
পিটিআইয়ের দাবি, জনগণের সমর্থন থেকে ইমরান খানকে কোনো শক্তিই বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। এই ইস্যু পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করলেও, ইমরান খান ও সেনাবাহিনীর উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক আরও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a comment