ইসরায়েলের টানা দুই বছরব্যাপী ভয়াবহ আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজার বুকে আবারও ফিরে এসেছে আনন্দ ও আশার এক অনন্য মুহূর্ত। পশ্চিম গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে ৫০০ জন কোরআনের হাফেজ ও হাফেজাকে সংবর্ধনা জানিয়ে আয়োজন করা হয়েছে আনন্দ মিছিল ও সম্মাননা অনুষ্ঠান। ধ্বংসস্তূপে পরিণত এই জনপদে এমন আয়োজন যুদ্ধক্লান্ত মানুষের মনে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করেছে।
ফিলিস্তিনি ইনফরমেশন সেন্টারের বরাতে জানা গেছে, জরুরি কমিটির তত্ত্বাবধানে এবং আইয়াদুল খাইর ফাউন্ডেশন ও কুয়েতভিত্তিক আলিয়া চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল— “গাজা কোরআনের হাফেজদের হাত ধরে আবারও বিকশিত হচ্ছে”।
শাতি শিবিরের ভেতর থেকে শুরু হওয়া আনন্দ মিছিলে তাকবির ও তাহলিল ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শৃঙ্খলাবদ্ধ সারিতে হেঁটে সামনে এগিয়ে যান হাফেজ ও হাফেজারা। তাদের হাতে ছিল পবিত্র কোরআন শরিফ, ফিলিস্তিনের পতাকা এবং দৃঢ়তা ও আশার বার্তাসংবলিত প্ল্যাকার্ড।
রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা করতালি ও দোয়ার মাধ্যমে তাদের অভিনন্দন জানান। যে সড়কগুলো একসময় বোমা হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী ছিল, সেগুলোই সেদিন রূপ নেয় শান্তি, আনন্দ ও মানবিক উল্লাসে ভরা এক গণউৎসবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া হাফেজা ইবতিসাম আবু হুয়াইদি বলেন, টানা দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে কোরআন হিফজ সম্পন্ন করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। তবে এই কঠিন সময়েই কোরআন তাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছে। তিনি বলেন, “আল্লাহর কিতাবই ছিল আমাদের বেঁচে থাকার আশ্রয়।” তিনি গাজার তরুণ-তরুণীদের কোরআনের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান ।
অনুষ্ঠানের এক কোণে হুইলচেয়ারে বসে আবেগভরা চোখে পুরো আয়োজন উপভোগ করেন এক হাফেজের অভিভাবক মুশিরা আবু ওয়াতফা। তিনি বলেন, দারিদ্র্য, অবরোধ ও যুদ্ধ—কোনো কিছুই গাজার মানুষকে কোরআন শিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। শরণার্থী শিবিরের রাস্তাজুড়ে হাফেজদের উপস্থিতি মানুষের মনোবল বাড়িয়েছে এবং আবারও প্রমাণ করেছে যে কোরআনই দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির আলোকবর্তিকা।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে হাফেজ ও হাফেজাদের হাতে সম্মাননাপত্র ও প্রতীকী উপহার তুলে দেওয়া হয়। আয়োজকেরা জানান, গাজার কঠিন বাস্তবতায় ধর্মীয় পরিচয় রক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ জোরদার করাই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, দুই বছরব্যাপী ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৮৩৫টির বেশি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১৮০টির বেশি। গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে অন্তত ৮৭৫ বার। এতে প্রাণ গেছে ৪১১ ফিলিস্তিনির এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ১১২ জন।
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজায় চালানো এই আগ্রাসনে প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ। পাশাপাশি বেসামরিক অবকাঠামোর প্রায় ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
Leave a comment