যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস এবং গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় এই হামলায় অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৭৭ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় চিকিৎসা সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বুধবার সকালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের কাছে আল-মাওয়াসি এলাকায় একাধিক লক্ষ্যে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।একই সময় গাজা সিটির শুজাইয়ার পূর্বাংশে বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়স্থল এবং জেইতুন এলাকার একটি ভবনে বোমাবর্ষণ করা হয়। জেইতুনের ওই ভবনে এক দম্পতি, তাদের তিন সন্তানসহ অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কার্যকর হলেও রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভোরে হামলার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন,“যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় বোমাবর্ষণ কখনোই পুরোপুরি থামেনি। যুদ্ধ এখনো চলছে, আর প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে।” তার মতে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা বাস্তবে তেমন কোনো পরিবর্তন আনেনি। বরং হামলা চলার কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, খান ইউনুস এলাকায় তাদের বাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে, এবং এরই জেরে হামাসের “একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে” আঘাত হানা হয়েছে।তাদের ভাষ্য, দেশটির নিরাপত্তার প্রতি যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় “দৃঢ় পদক্ষেপ” অব্যাহত থাকবে। তবে হামাস ইসরায়েলের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে,“ইসরায়েল অত্যন্ত দুর্বল ও স্পষ্ট মিথ্যা অজুহাত তৈরি করে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে।”
সংগঠনটির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “গণহত্যা পুনরায় শুরু করার পথ খুঁজছেন” এবং যুদ্ধবিরতিকে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছেন।গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা হামলা ও সংঘাতের কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে জায়গা কমে এসেছে, ওষুধ এবং জরুরি সরঞ্জাম সংকট তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও হামলা অব্যাহত থাকায় আহত মানুষদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মানবিক সহায়তা প্রত্যাশিত মাত্রায় গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। বহু পরিবার এখনো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে জীবনযাপন করছে, যাদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবায় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল তাদের অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও বেসামরিক মানুষের মৃত্যু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। তারা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছে।
Leave a comment