ইসরায়েলের ড্রোন ও বিমান হামলায় কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস কর্মকর্তাদের বৈঠকে ছয়জন নিহত হওয়ার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা থাকায় ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এ প্রথমবারের মতো উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) কোনো সদস্যরাষ্ট্রে হামলার দায় স্বীকার করল ইসরায়েল।
কাতার ঐতিহ্যগতভাবে কূটনীতি, মধ্যস্থতা ও শান্তি প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত হলেও এবার তাদের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলার ঘটনায় কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিক্রিয়া জানাতে একটি আইনজীবী দল গঠন করা হয়েছে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের উপসাগরীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ মনে করেন, কাতার সামরিক প্রতিশোধের পথে না গিয়ে কূটনৈতিক ও আইনি চাপের কৌশল বেছে নেবে। একই মত প্রকাশ করেছেন আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্রিস্টিন দিওয়ান, যিনি বলেছেন—আরব লিগ ও ওআইসির মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যৌথ নিন্দা জোরদার করবে দোহা।
হামলার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের শীর্ষ নেতৃত্ব দোহায় গিয়ে কাতারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই হামলা বছরের পর বছর ধরে মতপার্থক্যে বিভক্ত উপসাগরীয় দেশগুলোকে সাময়িকভাবে হলেও ঐক্যবদ্ধ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত হামলাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে, যা আঞ্চলিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তবে এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, কাতারে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদর দপ্তর এবং হাজারো সেনা মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের হামলা ঠেকানো যায়নি। ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হামলা জিসিসি সদস্যদের মধ্যে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা উদ্যোগ ও আকাশ প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ বাড়াতে প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়নের চাপও বাড়বে। কাতারের ওপর এই হামলা উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে ইরানের পাশাপাশি ইসরায়েলকেও নতুন নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
Leave a comment