নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বোর্নো প্রদেশে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের হামলায় অন্তত ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। দারুল জামা গ্রামে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে এ হত্যাযজ্ঞ ঘটে। নিহতদের মধ্যে সেনাসদস্যও রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, ক্যামেরুন সীমান্তবর্তী দারুল জামা গ্রামে মোটরসাইকেলে আসা সশস্ত্র জঙ্গিরা নির্বিচারে গুলি চালায় এবং ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্তত ২০টি বাড়ি ও ১০টি যাত্রীবাহী বাস ধ্বংস করা হয়। গ্রামের প্রধান রয়টার্সকে বলেন, “তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের হত্যা করেছে এবং নারীদের ছেড়ে দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত।”
সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়ার কমান্ডার বাবাগানা ইব্রাহিম বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নিহতদের মধ্যে ছয় সেনাসদস্যও রয়েছেন। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত ৭০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, সেনাদের আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। দারুল জামার বাসিন্দা বাবাগানা মালা জানান, “আমরা তিন দিন ধরে সৈন্যদের কাছে বোকো হারামের সমাবেশের খবর দিয়েছিলাম, কিন্তু অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হয়নি। হামলার সময় সৈন্যরা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয় এবং আমাদের সাথে পালিয়ে বামা শহরে আশ্রয় নেয়।”
হাজ্জা ফাতি নামের এক নারী, যিনি হামলায় ভাইকে হারিয়েছেন বলেন, “সরকার আমাদের বলেছিল এখানে নিরাপদ থাকব। এখন আবার আমাদের প্রিয়জনদের দাফন করতে হচ্ছে।” এই ঘটনা নাইজেরিয়ার ক্যাম্প বন্ধ করে বাস্তুচ্যুতদের গ্রামে ফিরিয়ে আনার নীতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বোকো হারাম ২০০৯ সাল থেকে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র লড়াই চালাচ্ছে। গত ১৫ বছরে এই সহিংসতায় অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০১৬ সালে বোকো হারাম থেকে আলাদা হয়ে গঠিত আইএসডব্লিউএপি বর্তমানে আরও সক্রিয়।
অলাভজনক সংস্থা গুড গভর্ন্যান্স আফ্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই নাইজেরিয়ায় প্রায় ৩০০টি হামলার ঘটনা রেকর্ড হয়েছে, যার অধিকাংশই আইএসডব্লিউএপি জঙ্গিদের হাতে সংঘটিত। এতে অন্তত ৫০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, বোকো হারামের কুখ্যাত কমান্ডার আলি গুলদ এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দারুল জামায় ভয়াবহ এ হত্যাযজ্ঞ শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করেনি, বরং বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন নীতির টেকসইতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে বেসামরিক মানুষের দুর্দশা আরও বাড়বে।
Leave a comment