সময়বয়সী তিন বন্ধু। একই গ্রামের বাসিন্দা তিনজন। কাজও করতেন একই কারখানায়। তিনজনের মৃত্যুও হয়েছে একইসঙ্গে। তাদের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়েছে আনিস, আরাফাত ও রিয়াজ । মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার বাসিন্দা তারা।
আবু তাহেরের ছেলে মোহাম্মদ আনিস ওই এলাকার একটি কারখানার গাড়িচালক ছিলেন এবং দিদারুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আরাফাত ও জিয়াউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ রিয়াজ ছিলেন চালকের সহকারী।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার পর , তিনজনের বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। তাদের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ছুটে আসেন স্বজনরা। ভিড় করেন এলাকার মানুষজনও। নিহতদের মধ্যে আনিস বিয়ে করেছেন মাত্র ২০ দিন আগে। তার মৃত্যুর খবরে ছুটে আসেন স্বজনরা। চলছিলন নারী ও শিশুদের আর্তনাদ। আহাজারি করতে করতে ভেতর মূর্ছা পড়ে ছিলেন তার নববিবাহিতা স্ত্রী।
আরফাত ও রিয়াজের ঘরেও একই অবস্থা। আহাজারি করতে করতে আরফাতের নানি বিবি আমেনা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- শৈশবেই মাকে হারান আরাফাত। এরপর নানির কাছেই তার বেড়ে ওঠা।
অন্যদিকে, নিহত রিয়াজ ছিলেন বাবা জিয়াউর রহমানের একমাত্র ছেলে। তার আয়ে সচ্ছলভাবে সংসার চলছিল। তার মৃত্যুতে যেন এলোমেলো করে দিয়েছে সব। বাবা জিয়াউর রহমান ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না । আহাজারি করতে করতে তিনি বলছিলেন- আল্লাহ আমার শান্ত ছেলেটারে কেন নিয়ে গেলে।
সেই রাতে কী ঘটেছিল
ঘটনাস্থলে ছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা রায়হান হোসেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি রেললাইন থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান বলে জানান। রায়হান বলেন, রাত ৮টার দিকে চারজন পূর্ব পাশের চট্টগ্রামমুখী রেলপথ ধরে উত্তর দিকে হেঁটে বিএসআরএম কারখানার দিকে যাচ্ছিলাম। কেউ কেউ মুঠোফোন দেখে কথা বলে বলে হাঁটছিলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামমুখী লেনে সাধারণত উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ট্রেন যায়। তাই আমরা সামনে ট্রেন এলে দেখব ভেবে রেলপথ ধরে হেঁটেছি। হাঁটার সময় বারবার ট্রেনের হুইসেল শুনলেও আমরা ভেবেছি পাশের লেন দিয়ে ট্রেন আসছে। এর মধ্যেই কাছাকাছি চলে আসে ট্রেন। ট্রেনের ধাক্কায় রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে আরাফাত, আনিস ও রিয়াজ। আমি একটু সামনে ছিলাম। দুর্ঘটনার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মুহূর্তের মধ্যে লাফ দিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, অমনোযোগী হয়ে রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন নিহত তিন তরুণ। ঢাকামুখী সোনার বাংলা ট্রেন ধাক্কা দেয় তাদের। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আবু জাফর বলেন, কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিতে মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনা রাস্তার মুখে প্রচণ্ড গতিতে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে নাজুক হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ওপর থাকা কালভার্টটি। দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকায় এক লেন দিয়ে ট্রেন চলাচল করেছে। অভিযোগ করে বলেন, রেললাইনে মানুষের অবৈধ অবস্থান ও অসচেতনতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে ।
Leave a comment