চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধসে পড়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বেইলি সেতু। শনিবার (২১ জুন ২০২৫) বেলা সাড়ে তিনটায় মিরসরাই পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোভানিয়া ছড়ার ওপর অবস্থিত সেতুটির উত্তর পাশের গোড়ার মাটি সরে গেলে সেটির একাংশ নদীতে ধসে পড়ে। ফলে মিরসরাই চাঁদপুর গোভানিয়া-ফটিকছড়ি সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে মিরসরাই পৌরসভা ও ফটিকছড়ি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডও লাগিয়েছিল। এরপরও তা সংস্কারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আজ দুপুরে তীব্র স্রোতের ফলে সেতুর মাটি সরে গিয়ে ধসের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ধসে পড়া অংশের আশপাশে কৌতূহলী জনতা ভিড় করেছেন। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই হেঁটে পার হচ্ছেন হেলে পড়া সেতুর ওপর দিয়ে। উপস্থিত অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “এই সেতু দিয়ে শুধু যাত্রী চলাচলই হয় না, বরং পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বাঁশ, কাঠ, মৌসুমি ফল যেমন আম, কাঁঠাল ও আনারস আনা–নেওয়া হয়। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ফল ব্যবসায়ী ও বাগানমালিকরা চরম বিপদে পড়েছেন।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত তদারকি ও মেরামতের অভাবে তা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নেমে এ ধরনের দুর্যোগ ঘটবে, তা জানা সত্ত্বেও আগে থেকেই কোনো বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে মিরসরাই পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পর জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। যেহেতু সড়কটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন, তাই তাদের মেরামতের জন্য অবহিত করা হয়েছে।”
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সীতাকুণ্ড) মোহাম্মদ ফারহান বলেন, “আমরা সেতু ধসে পড়ার খবর পেয়েছি। আগামীকাল সকাল থেকে সেতু মেরামতের কাজ শুরু হবে। আপাতত বিকল্প কোনো পথের ব্যবস্থাও চিন্তা করা হচ্ছে।”
এই সেতু ধসের ফলে জরুরি চিকিৎসাসেবা, পণ্য পরিবহন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত মেরামত কাজ শুরু করলেও, পুরো সেতু পুনর্নির্মাণ কিংবা কার্যকর সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এই দুর্ভোগ কাটার সম্ভাবনা কম। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটনা হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
Leave a comment