ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের ইউরোপ যাত্রায় নেমে লাশ হয়ে ফিরলেন মাদারীপুরের তরুণ রিফাত তালুকদার (২৫)। লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রার সময় নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ মাস পর তাঁর মরদেহ আজ শনিবার বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার তালুকদারকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছায়।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভূমধ্যসাগরে দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হন রিফাত। পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার জন্য অক্টোবরে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন তিনি। প্রথমে দুবাই, সেখান থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে যান। সেখানে দুই মাস অপেক্ষার পর ওই ডিসেম্বরের দিনে একটি নৌকায় চড়ে যাত্রা শুরু করেন ইউরোপের উদ্দেশে। কিন্তু মাঝসমুদ্রে ইঞ্জিন বিস্ফোরণের ফলে নৌকাটি ডুবে যায়।
নৌকাডুবির পর রিফাত গুরুতর আহত হন। পরে লিবিয়ার কোস্টগার্ড তাঁকে উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে বাঁচানো যায়নি। দুই দিন পর হাসপাতালেই মৃত্যু হয় রিফাতের।
মৃত্যুর খবর জানার আগ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা অন্ধকারে ছিলেন। সেই ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে রিফাতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। পরে বিভিন্ন সূত্র ও সরকারি সহায়তায় পরিবারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটে গত ২৬ মার্চ, যখন লিবিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে রিফাতের মরদেহ শনাক্ত হয়।
আজ বিকেলে জানাজা শেষে রিফাতের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একমাত্র সন্তানের মরদেহ গ্রহণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা হুমায়ুন তালুকদার ও মা শিল্পী বেগম। হুমায়ুন তালুকদার বলেন, “ওই দিন (১৮ ডিসেম্বর) শেষবারের মতো রিফাতের সঙ্গে কথা হয়। তারপর কোনো খবর পাইনি। মনে করেছিলাম, বেঁচে আছে। এখন সব শেষ হয়ে গেল।”
রিফাতের মা বারবার ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে বিলাপ করছিলেন, “আমার ছেলেটা ছাড়া আমার আর কেউ নাই… আমার বাপজানকে ফিরায়া দাও।”
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভীন খানম জানান, লিবিয়া থেকে সরকারিভাবে মরদেহ দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রশাসন এই ঘটনার খোঁজখবর নিচ্ছে এবং প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
রিফাতের মৃত্যু শুধু এক পরিবারের নয়, পুরো গ্রামের মানুষের মনে গভীর বেদনা ছড়িয়েছে। স্বপ্নের ইউরোপ যাত্রার পথে মৃত্যু যেন হয়ে উঠেছে হাজারো তরুণের নির্মম বাস্তবতা।
Leave a comment