সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা ও তাঁর দলীয় বক্তব্যকে ঘিরে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। সোমবার (৭ এপ্রিল) দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি জানান, খুব শিগগিরই তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বিচার করবেন। ভারতীয় বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, এই বৈঠক থেকেই স্পষ্ট হয়েছে—শেখ হাসিনা এখন আর নীরব নন, তিনি প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতিতে রয়েছেন।
ভার্চুয়াল আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, “চিন্তা করবেন না, আমি আসছি।” এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তা গুরুত্বসহকারে প্রচার করতে থাকে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই ভার্চুয়াল বৈঠকে শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী, পুলিশ, আনসারদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তা বিভৎস। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীরাও নিস্তার পাননি। একটা বিশৃঙ্খল, সন্ত্রাসময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমার বিশ্বাস, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন যেন এই অন্যায়কারীদের একে একে শাস্তির মুখোমুখি করতে পারি। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের কোনো ঠাঁই নেই, তাদের বিতাড়িত করেই শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।”
দেশ ছাড়ার পর থেকেই শেখ হাসিনা একাধিকবার ভার্চুয়ালি দলের নেতাকর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের অনেক নেতাকর্মীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর, চাকরিচ্যুতি এবং নির্যাতনের অভিযোগও উঠে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর “আসছি” বার্তা অনেকের মনেই ফিরিয়ে আনার এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত জাগিয়ে তুলেছে।
তবে দেশে এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মূলধারার গণমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ এক নির্দেশনা দিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রকাশিত আদেশে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার যেকোনো ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করেন এবং তার অনুলিপি বিটিআরসি সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়।
এছাড়াও ট্রাইব্যুনাল সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, লন্ডনে দেওয়া শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তব্য ‘বিদ্বেষমূলক’ কি না তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। অতীতেও তাঁর যেকোনো বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।
এই নির্দেশনা একদিকে যখন তাঁর বক্তব্য প্রচারে আইনি বাধা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে তাঁর দলীয় ভার্চুয়াল বার্তা ভারতীয় গণমাধ্যমে চাউর হয়ে একটি রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করছে—ফেরার বার্তা কি তাহলে রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন মোড় আনবে?
Leave a comment