ভারতের রাজস্থানে এক নারীর অভিনব প্রতারণার কাহিনি প্রকাশ্যে এসেছে, যা শুনে স্তম্ভিত সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত। অনুরাধা পাসওয়ান নামের এক ৩২ বছর বয়সী নারীকে আটক করেছে পুলিশ, যিনি বিয়ের ফাঁদে ফেলে অন্তত ২৫ জন পুরুষের কাছ থেকে গয়না, নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিন্ন পরিচয়, নতুন শহর ও ভুয়া পারিবারিক ইতিহাস সাজিয়ে তিনি এই প্রতারণা চালাতেন। তাঁর এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হচ্ছে ‘ডাকাত কনে’ নামে।
প্রতিবার অনুরাধা নিজেকে গরিব, একাকী ও অসহায় এক তরুণী হিসেবে তুলে ধরতেন। দেখাতেন, তাঁর একটি বেকার ভাই রয়েছে এবং সংসারে টানাপোড়েন চলছে। এরপর নিজেকে পাশের বাড়ির সুন্দরী কনে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে খুঁজতেন বর। একটি সংগঠিত চক্রের সহায়তায় তাঁর জীবনবৃত্তান্ত, ছবি ও পরিচয় পাত্রদের কাছে পাঠানো হতো। ওই চক্রের সদস্যরা ঘটক সেজে প্রতিটি বিয়ের জন্য দেড় থেকে দুই লাখ রুপি করে নিতেন।
বিয়ের আগে হবু বরদের সঙ্গে মন্দির বা ঘরে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হতো। এরপর শুরু হতো অনুরাধার প্রতারণার আসল পর্ব। বিয়ের পর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতেন, নিজেকে একজন আদর্শ স্ত্রী ও পুত্রবধূর ভূমিকায় উপস্থাপন করতেন। এরপর এক রাতে হঠাৎ খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে বর ও পরিবারের সদস্যদের অচেতন করে গয়না, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যেতেন।
এই প্রতারণার শিকারদের একজন হলেন রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর জেলার বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মা। ফেরি করে পণ্য বিক্রি করে জীবিকা চালানো বিষ্ণু ঋণ করে অনুরাধার সঙ্গে বিয়ে করেন। কথিত ঘটক পাপ্পু মীনার মাধ্যমে মধ্যপ্রদেশের অনুরাধার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়েতে দুই লাখ রুপি দেন তিনি। কিন্তু বিয়ের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুরাধা উধাও হয়ে যান। সঙ্গে নিয়ে যান প্রায় সোয়া লাখ রুপির গয়না, নগদ ৩০ হাজার রুপি ও আরও ৩০ হাজার রুপির একটি মুঠোফোন। বিষ্ণু বলেন, “সেদিন রাতে আমি কাজ থেকে দেরিতে ফিরেছিলাম, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি সে নেই। পরে বুঝলাম, আমাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল।”
এই ঘটনার পর বিষ্ণুর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে অনুরাধার দীর্ঘ প্রতারণার ইতিহাস। এরপর পুলিশ অভিনব এক কৌশলে অনুরাধাকে ধরার পরিকল্পনা করে। সাওয়াই মাধোপুর পুলিশের একজন কনস্টেবলকে বর সাজিয়ে পাঠানো হয় দালালদের কাছে। ওই কনস্টেবল একজন খদ্দের সেজে বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। দালাল তাঁকে কয়েকজন নারীর ছবি দেন, যার মধ্যে অনুরাধার ছবি শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ জানায়, চক্রটি যেসব কাগজপত্র দেখাত, তার সবই ভুয়া ছিল। শেষ পর্যন্ত ভোপাল থেকে অনুরাধাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, তিনি অন্তত ২৫টি ভুয়া বিয়েতে অংশ নিয়েছেন এবং প্রতিবারই একই কৌশলে পালিয়ে গেছেন।
এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা যুক্ত আছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এ ধরনের ভুয়া বিয়ের প্রতারণা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে রাজস্থান পুলিশ।
Leave a comment