১৩ ফেব্রুয়ারি, বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তবে তার অভিনয় আজও দর্শকের হৃদয়ে অমলিন, স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল।
হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও শক্তিমান অভিনেতা। তার অভিনয়ের দক্ষতা এতটাই অনবদ্য ছিল যে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যেতেন চরিত্রের গভীরে। কখনো তিনি ছিলেন নায়ক, কখনো খলনায়ক, কখনো আদর্শ, কখনো বা অনুকরণীয় এক প্রতিভা। মঞ্চ থেকে শুরু করে টেলিভিশন নাটক, এবং অবশেষে চলচ্চিত্র—সবখানেই ছিল তার দাপুটে বিচরণ।
অভিনয়ে পথচলা ও খ্যাতির শিখরে
১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন হুমায়ুন ফরীদি। খুব অল্প সময়েই তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র হয়ে ওঠেন। খল চরিত্রে তার অভিনয় যেমন দাগ কেটেছে দর্শকদের মনে, তেমনি ইতিবাচক চরিত্রেও তিনি দেখিয়েছেন অসাধারণ অভিনয়শৈলী। শুধুমাত্র সিনেমাই নয়, টেলিভিশন নাটক এবং মঞ্চেও তার অভিনয়ের অনুরাগী ছিলেন অসংখ্য দর্শক।
তিনি ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। মৃত্যুর ছয় বছর পর ২০১৮ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
প্রথম অভিনয় ও উল্লেখযোগ্য কাজ
হুমায়ুন ফরীদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকে তক্ষকের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে তার অভিষেক ঘটে।
১৯৮২ সালে ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকের মাধ্যমে তিনি ছোট পর্দায় আসেন। এরপর তিনি ‘সংশপ্তক’, ‘ভাঙনের শব্দ শোনা যায়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্রেও তিনি ছিলেন এক অনন্য নাম। ‘মায়ের অধিকার’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।
শেষ চলচ্চিত্র ও চিরবিদায়
হুমায়ুন ফরীদির অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘এক জবানের জমিদার, হেরে গেলেন এবার’। সিনেমাটির কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে এবং মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। এতে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই কিংবদন্তি ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৬০ বছর বয়সে ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজও তার অভিনয়ের যাদু দর্শকের হৃদয়ে অমলিন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় হুমায়ুন ফরীদিকে স্মরণ করছি।
Leave a comment