কক্সবাজারের টেকনাফে এজাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে হামাগুড়ি দিয়ে এসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মুহাম্মদ ইউনুস।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়ায়মুহাম্মদ ইউনুসের বাড়ি। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছেন তিনি। এবার এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখেন, একদিন পরিবারের হাল ধরবেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন। নিয়োজিত থাকবেন দেশের জন্য।
স্থানীয়রা বলছেন, সমাজের আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক নয় ইউনুস। তিনি জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী।
পায়ে ভর করে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেন না। তার দুই পা অপূর্ণ। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেলা করেন। তবুও জীবনযুদ্ধে থেমে যাননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার বেশ আগ্রহ। ফলে প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।
ইউনুসের মা নুরুজ জামাল বলেন, শত কষ্ট ও অভাব-অনটনের মধ্যেও আমি সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছি। আমি চাই ওরা মানুষের মতো মানুষ হোক। অর্থের কারণে ওদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে আমার খুবই কষ্ট হয়। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি তাকে পড়াতে।
ইউনুস বলেন, জন্ম পর থেকে হাঁটতে পারি না। প্রথমে কেউ ভাবেনি আমার পক্ষে লেখাপড়া করা সম্ভব হবে। তবে আমার বাবা-মায়ের আগ্রহ আর শিক্ষকদের সহযোগিতায় তা সম্ভব হচ্ছে। আমার চলফেরা করতে খুব কষ্ট হয়। আমার মতো অনেক প্রতিবন্ধী ভিক্ষা করে জীবন যাপন করছে। আমি প্রতিবন্ধী হলেও একজন মানুষ। তারপরও আমি পড়ালেখা বাদ দেব না।
আমার ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমি উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মতো মানুষ হব। এটাই আমার আসল স্বপ্ন। আমি মনে করি সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমি লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে।
কেন্দ্রের সচিব ও এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাব্বির আহমদ বলেন, শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার বা উন্নয়নে শারীরিক প্রতিবন্ধী মুহাম্মদ ইউনুস আর তার পিতা-মাতা হতে পারে অনন্য উদাহরণ।
আমাদের পক্ষ থেকে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেমোহাম্মদ ইউনুস যেন ভালোভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য। তাকে অন্যদের চেয়ে ৩০ মিনিট বেশি সময় দেওয়া হয়।
Leave a comment