১৯২৯ সালের ডিসেম্বর, হাঙ্গেরির ছোট শহর সলনোকের আদালতে একটি অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর বিচার শুরু হয়। নাগিরেভ গ্রামের কয়েক ডজন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে —তারা তাদের স্বামীদের ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ দিয়ে হত্যা করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে বুদাপেস্ট থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই কৃষক গ্রামে ৫০ জনেরও বেশি পুরুষকে আর্সেনিক দিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, এই নারীরা ‘এঞ্জেল মেকার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেখানে কেউ কাউকে হত্যা করে, সাধারণত স্বামী বা শিশুকে।
বিচারের সময় এক নাম বারবার উঠে আসে—ঝুঝানা ফাজেকাশ, গ্রামের একজন ধাত্রী ও কার্যত চিকিৎসক। তিনি গ্রামের নারীদের সমস্যাগুলো শুনতেন এবং স্বামীর নির্যাতন বা হিংসার শিকার নারীদের আর্সেনিক সরবরাহ করতেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য টাইমস জানিয়েছিল, ফাজেকাশের বাগানে বিষের শিশি পাওয়া যায়। পরে পুলিশ আগমনের আগেই তিনি বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
নাগিরেভের কবরস্থান পরীক্ষা করার পর দেখা যায়, ৫০টি মৃতদেহের মধ্যে ৪৬টিতে আর্সেনিক উপস্থিত। বিচারিক প্রক্রিয়ায় ২৬ নারীকে দোষী সাব্যস্ত করে; ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বেশিরভাগ নারী দোষ স্বীকার করেননি।
তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে তত্ত্ব আছে দারিদ্র্য, লোভ, একঘেয়েমি, এবং স্বামীর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা। বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরুষদের অনুপস্থিতিতে নারীরা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে শুরু করেছিলেন।
নাগিরেভের বাইরে নিকটবর্তী টিজাকুর্ট শহরেও আর্সেনিকযুক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়, যা ইঙ্গিত দেয় মৃতের সংখ্যা ৩০০-এরও বেশি হতে পারে।
২০০৪ সালে বিবিসির সাথে কথা বলেছেন মারিয়া গুনিয়া। তিনি বলেন, “বিষক্রিয়ার এই ঘটনা প্রকাশের পর স্বামীদের আচরণে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়।” এই ভয়ঙ্কর ঘটনা নারীদের অধিকার, স্বামীর সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক এবং অতীতের সামাজিক কাঠামোর জটিলতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
Leave a comment