ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাটে মা লায়লা আফরোজ ও তার কন্যা নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে—তাদের সুরতহাল প্রতিবেদনে আঁতকে ওঠার মতো তথ্য এসেছে। সুরতহালে দেখা গেছে, লায়লা আফরোজের শরীরে মোট ৩০টি জখম রয়েছে; আর কিশোরী নাফিসার গলায় রয়েছে চারটি গভীর আঘাত।
সুরতহালের বিশদ বর্ণনায় বলা হয়েছে— আফরোজার বাম গালে ৩টি, থুতনিতে ৪টি, গলার নিচে বাম পাশে ৫টি, বাম হাতে ৩টা, বাম হাতের কব্জিতে ১টি, ডান হাতের কব্জিতে ২টি, বুকের বাম পাশে ৯টি, পেটের বাম পাশে ২টা ও তলপেটের নিচে একটি জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
অপর দিকে নাফিসার বুকের দুই পাশে ৪টি গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারালো ছুরিকাঘাতে ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমন সুরতহাল সাম্প্রতিক সময়ে তারা দেখেননি। হত্যার ধরন ও নৃশংসতা দেখে ঘাতককে প্রশিক্ষিত বলে ধারণা করছেন তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফ্ল্যাট তল্লাশি করে বাথরুম থেকে একটি চাইনিজ সুইচ গিয়ার ও একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। এই দুটি অস্ত্র দিয়েই মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে তদন্তকারী দল। বাসার বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ, ভাঙাচোরা আলমারি—এসবই প্রাথমিকভাবে ধস্তাধস্তির ইঙ্গিত বহন করছে।
এদিকে ভবনের একাধিক সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, গৃহকর্মী আয়েশাকে খুনের দিন (সোমবার) সকাল ৭টা ৫২ মিনিটে কালো বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। এরপর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
নাফিসার পিতা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, চারদিন আগে ভবনের দারোয়ান মালেকের মাধ্যমে ওই গৃহকর্মী তাদের বাড়িতে আসে। গৃহকর্মী নিজেকে আয়েশা নামে পরিচয় দেয় এবং দাবি করে যে সে রংপুরের বাসিন্দা—তার বাবা-মা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি ফোন নম্বর ও স্থায়ী ঠিকানা জানাতে অস্বীকার করায় পরিবার একটু সংশয় করলেও কাজে রেখে দেন। সকালে এসে বাসার কাজ করে চলে যেত। এরমধ্যে রোববার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যায়। সন্দেহ হলেও গৃহকর্মীকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি; তা যাচাই-বাছাই চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যার আগে ও পরে গৃহকর্মীর উপস্থিতি ও কার্যকলাপের নিখুঁত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ যোগসাজসে ছিল কি না—তা খতিয়ে দেখা হবে।”
পুলিশ ইতোমধ্যে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে এবং বাসার আশপাশে আরও সিসিটিভি লিংক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Leave a comment