মিয়ানমারের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে গত এক বছরে ভয়াবহ নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা। এসব বর্বরতার মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক শক, শ্বাসরোধ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো নির্মমতা।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে, দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার (IIMM)। প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন-পীড়নের মুখে পড়ে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয় । বর্তমানে মিয়ানমারের একটি বড় অংশে সেনা ও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
তদন্ত দলের প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান জানান, আটক কেন্দ্রগুলোতে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্তকরণে অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে আটক যোদ্ধা বা তাঁদের সহযোগী বেসামরিক মানুষদের বিচার ছাড়াই হত্যায় জড়িত সেনা সদস্য, মিলিশিয়া ও বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের চিহ্নিত করার কাজও এগিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্দিশিবিরে আটক ব্যক্তিরা মারধর, বৈদ্যুতিক শক, শ্বাসরোধ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং যৌন অঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো চরম সহিংসতার শিকার হয়েছেন। কুমজিয়ান বলেন, “আমরা এমন একটি দিনের জন্য কাজ করছি, যখন এসব অপরাধী আদালতে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে।”
সংস্থাটি রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে সেনাবাহিনী ও বিরোধী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। এর ফলে বহু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে রোহিঙ্গারা, নতুন করে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। ২০১৭ সালে নিপীড়ন এড়াতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। গত বছর রাখাইনে সহিংসতা বাড়লে আরও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
২০১৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধীনে গঠিত IIMM মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। সংস্থাটি রোহিঙ্গা–বিষয়ক মামলার প্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত (ICJ)-এ পেশ করেছে।
Leave a comment