পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন, কিন্তু সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী বেতন ও ভাতা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ আসলেও নানা জটিলতার কারণে এখনো অনেক শিক্ষক তাদের প্রাপ্য অর্থ তুলতে পারেননি। অনেকে ধার-দেনায় চলতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ কেউ পরিবারকে ভুল তথ্য দিয়ে বাড়ি না যাওয়ার অজুহাত খুঁজছেন।
রংপুরের এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক আবু রাশেদ নোমান জানুয়ারি মাসে ইনডেক্স নম্বর পেলেও এখনো বেতন পাননি। তিনি বলেন, “চাকরি আছে, কিন্তু বেতন নেই। বাবা-মাকে কিছু কিনে দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। রোজার সময় কয়েক হাজার টাকা ধার করেছি, কীভাবে পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না।”
একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন নোয়াখালীর শিক্ষক আসাদুল্লাহ মিয়াজী। দিনাজপুরের বাসিন্দা এই শিক্ষক বলেন, “এক মাসের বাসা ভাড়া বাকি, কিস্তির টাকা দিতে হচ্ছে, এমনকি প্রতিমাসের ওষুধ কেনার জন্য ফার্মেসিতেও বাকি পড়ছে। ধার করেই এখন চলতে হচ্ছে।”
শিক্ষকদের অভিযোগ, কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তারা চাইলে ঈদের আগেই এই অর্থ ছাড় করা সম্ভব হতো। শিক্ষকদের বেতন এখন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ব্যবস্থার মাধ্যমে দেওয়া হলেও নামের অসঙ্গতি, সনদের ভুল তথ্যসহ বিভিন্ন কারণে টাকা আটকে আছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক মো. শান্ত আলী বলেন, “শিক্ষকরা সরকারের আওতাভুক্ত হলেও তাদের প্রতি অবহেলা অব্যাহত রয়েছে। কয়েক লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।”
অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, নতুন পদ্ধতির কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে, তবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান জানান, “আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন দিয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় ও ব্যাংকের কাজ বাকি।”
শিক্ষকরা আশায় রয়েছেন, ঈদের পর হলেও যেন তাদের পাওনা টাকা দ্রুত পরিশোধ করা হয়, যাতে আগামী দিনে তারা এমন দুর্ভোগে না পড়েন।
Leave a comment