গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষ হলো ড্র দিয়ে। তবে শেষ দিনের খেলার ধরন এবং ইনিংস ঘোষণার সময় নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ দল কি আরও আগে ইনিংস ঘোষণা করলে জয় সম্ভব ছিল কি না—এই প্রশ্নে আলোচনায় উত্তপ্ত ক্রিকেট অঙ্গন।
পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে খেলতে নামে। শ্রীলঙ্কার থেকে তখন তারা এগিয়ে ১৮৭ রানে। দিন শুরু করার কিছু পরেই রানআউট হন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম, মাত্র এক রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি হাতছাড়া করে। তার পরেই মাঠে নামে বৃষ্টি এবং প্রায় তিন ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির সময় বাংলাদেশ ২৪৭ রানে এগিয়ে ছিল। খেলা ফের শুরু হলে বাংলাদেশ দল ব্যাটিং অব্যাহত রাখে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন।
সেই সময় পর্যন্ত খেলার বাকি ছিল মাত্র ৩৭ ওভার। শ্রীলঙ্কাকে জয়ের জন্য লক্ষ্য দেওয়া হয় ২৬৭ রান, যা এই কম সময়ের মধ্যে অতিক্রম করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল এই সময়ের মধ্যেই লঙ্কানদের অলআউট করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩২ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট তুলতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। সময় ফুরিয়ে এলে দুই দলের সম্মতিতে ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হয়।
ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে প্রশ্ন করা হয়, দল কি ইনিংস ঘোষণায় দেরি করে ফেলেছে? নাজমুল উত্তরে বলেন, “বৃষ্টিটা হুট করে চলে আসায় পরিকল্পনা হঠাৎ বদলাতে হয়েছে। এ সব তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বৃষ্টি না হলে আমরা আরও আগেই ঘোষণা করতাম।” তিনি যোগ করেন, “তবে ইনিংস ঘোষণার পর যে কয়টা ওভার খেলা হয়েছে, সেখানে আমাদের বোলাররা ভালো করেছে। বিশেষ করে তাইজুল ও নাঈম যেভাবে বল করেছে, সেটা প্রশংসার দাবিদার।”
দলের পক্ষে সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরমার ছিলেন অধিনায়ক নিজেই। ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার, যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো এই কৃতিত্ব। ক্যারিয়ারে এটি তাঁর দ্বিতীয় জোড়া সেঞ্চুরি। এ প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, “আমি বিষয়টা জানতাম না, তবে দলে অবদান রাখতে পারাটা আমার জন্য বড় সম্মানের।”
এই ম্যাচে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ যথেষ্ট কার্যকর ছিল। প্রথম ইনিংসে নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম ৬ উইকেট নেন, দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁরা ৪ উইকেট ভাগ করে নেন। সময়ের ঘাটতি না থাকলে ম্যাচের ফলাফল হয়তো ভিন্ন হতে পারত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ম্যাচটি ড্র হলেও পারফরম্যান্সে স্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে অধিনায়কের ধারাবাহিক ফর্ম এবং স্পিন আক্রমণের কার্যকারিতা আগামীর জন্য আশার আলো জাগাচ্ছে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে জয় পেতে হলে কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—গল টেস্ট সেই বাস্তবতা আবারও সামনে এনেছে।
Leave a comment