এ অঞ্চলের সামাজিক বাস্তবতায় বিয়েতে বয়সের ব্যবধান বহু বছর ধরেই একটি আলোচিত বিষয়। একসময় স্বামী–স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান ৫ থেকে ১০ বছর থাকাই স্বাভাবিক ছিল। তবে আধুনিক সময়ে এই ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। এখন অনেকেই কাছাকাছি বয়সে বিয়ে করছেন। তবু এখনো এমন দম্পতির দেখা মেলে, যেখানে স্বামী বা স্ত্রী একজন অপরজনের তুলনায় দ্বিগুণ বয়সী। বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়সের এমন ফারাকে বিয়ে হলে দম্পতিরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়তে পারেন।
গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, বয়সের ব্যবধান যত বেশি হয়, ততই সন্তান ধারণ ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ে। নারীর ক্ষেত্রে ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমতে শুরু করে। এতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি সন্তান জন্মের সময় জটিলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সন্তানের জেনেটিক সমস্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
শুধু নারী নয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মানেও পরিবর্তন আসে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, বয়স্ক বাবার সন্তানদের মধ্যে অটিজম বা এডিএইচডি–জাতীয় সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। শুক্রাণুর মিউটেশনও বেশি হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সম্ভাবনা তৈরি করে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে নারী–পুরুষ উভয়ের হরমোনজনিত পরিবর্তনও ঘটে। নারীদের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের পর থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে এবং ৫০ বছরের দিকে মেনোপজ হয়। এতে যৌন চাহিদা হ্রাস পায়। অন্যদিকে, পুরুষদের টেস্টোস্টেরন কমে গেলে যৌন অক্ষমতার ঝুঁকি তৈরি হয়। এর বাইরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, রক্তনালির সমস্যা ও স্ট্রোকের মতো রোগ যৌনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। সঙ্গীর বয়স কম হলে এসব সমস্যা সম্পর্কের ভেতরও চাপ তৈরি করতে পারে।
তাহলে বিয়েতে কতখানি বয়সের ব্যবধানকে স্বাস্থ্যসম্মত বলা যায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কোনো নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক সূত্র নেই। তবে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে আদর্শ বয়স নারীদের জন্য ২৫ থেকে ২৯ বছর এবং পুরুষদের জন্য ৩০ বছরের কাছাকাছি ধরা হয়। কারণ ৩৫ বছরের পর থেকে পুরুষদের শুক্রাণুর মান পড়তে থাকে।
সুতরাং, বয়সের ফারাক শুধু সামাজিক নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সম্পর্কের বোঝাপড়া যেমন জরুরি, তেমনি শারীরিক সুস্থতার জন্যও বয়সের ভারসাম্যকে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিতে বলছেন।
 
                                                                         
                                                                        
 
                                 
			             
			             
				             
				             
				            
Leave a comment